আমরা কোনো একটি মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে সহজেই মৌলটি কোন গ্রুপ এবং কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটি বের করতে পারি। নিচে পর্যায় সারণিতে কোনো মৌলের অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
পর্যায় নম্বর বের করার নিয়ম
কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের সবচেয়ে বাইরের প্রধান শক্তিস্তরের নম্বরই ঐ মৌলের পর্যায় নম্বর। যেমন— Li এর ইলেকট্রন বিন্যাস হলো: Li(3) ⇒ 1s2 2s2 । যেহেতু লিথিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাসে সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তর 2, তাই লিথিয়াম 2 নম্বর পর্যায়ের মৌল।
K এর ইলেকট্রন বিন্যাস হলো: K (19) → 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 4s1 । যেহেতু পটাশিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাসে সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তর 4, তাই পটাশিয়াম 4 নম্বর পর্যায়ের মৌল।
গ্রুপ নম্বর বের করার নিয়ম
কোনো মৌলের গ্রুপ নম্বর বের করার কয়েকটি নিয়ম আছে।
নিয়ম 1: কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের বাইরের প্রধান শক্তিস্তরে যদি শুধু s অরবিটাল থাকে তবে ঐ s অরবিটাল এর মোট ইলেকট্রন সংখ্যাই ঐ মৌলের গ্রুপ নম্বর। যেমন: হাইড্রোজেন, H ( 1 ) মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 1 st । এখানে s অরবিটালে 1টি ইলেকট্রন আছে। কাজেই হাইড্রোজেন-এর গ্রুপ বা শ্রেণি নম্বর 1 ।
নিয়ম 2: কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের বাইরের প্রধান শক্তিস্তর যদি শুধু s ও p অরবিটাল থাকে তবে S 3 অরবিটাল-এর মোট ইলেকট্রন সংখ্যার সাথে 10 যোগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেই সংখ্যাই ঐ মৌলের গ্রুপ নম্বর। যেমন: বোরন B(5) মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s2 2s2 2p1 এখানে বোরনের বাইরের শেলে s অরবিটালে 2টি ইলেকট্রন ও p অরবিটালে 1টি ইলেকট্রন আছে। কাজেই বোরন এর গ্রুপ নম্বর 2 + 1 + 10 = 13
নিয়ম 3: কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সবচেয়ে বাইরের প্রধান শক্তিস্তরে যদি s অরবিটাল থাকে এবং আগের প্রধান শক্তিস্তরে যদি d অরবিটাল থাকে তবে s অরবিটাল ও d অরবিটালের ইলেকট্রন সংখ্যা যোগ করলেই গ্রুপ নম্বর পাওয়া যায়। যেমন: Fe (26) মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 3d6 4s2 । এখানে আয়রন এর বাইরের শক্তিস্তরে s অরবিটাল আছে এবং তার আগের শক্তিস্তরে d অরবিটাল আছে। এখানে d অরবিটালে চটি এবং s অরবিটালে 2টি ইলেকট্রন আছে। কাজেই আয়রন-এর গ্রুপ নম্বর 6 + 2 =8।
তোমাদের বোঝার সুবিধার জন্য মৌলের সবচেয়ে বাইরের স্তরের ইলেকট্রন বিন্যাসকে বোল্ড করে দেখানো হয়েছে।
| মৌল | মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস | পর্যায় নম্বর | গ্রুপ বা শ্রেণি নম্বর |
| H(1) | 1s1 | 1 | ( নিয়ম 1 ) |
| He(2) | 1s2 | 1 | 18 (ব্যতিক্রম) |
| Li(3) | |||
| Be(4) | |||
| B(5) | 1s2 2s2 2p1 | 2 | 2 + 1 + 10 = 13 (নিয়ম 2 ) |
| C(6) | |||
| N (7) | 1s2 2s2 2p3 | 2 | 2 + 3 + 10 = 15 (নিয়ম 2 ) |
| 0(8) | 1s2 2s2 2p4 | 2 | 2 + 4 + 10 = 16 ( নিয়ম 2 |
| F(9) | 1s2 2s2 2p5 | 2 | 2 + 5 + 10 = 17 (নিয়ম 2) |
ইলেকট্রন বিন্যাসের মাধ্যমে কোনো মৌল কতো নম্বর পর্যায় এবং কতো নম্বর গ্রুপে অবস্থান করে তা বের করা যায়। আবার, যে সকল মৌলের বাইরের প্রধান শক্তিস্তরের ইলেকট্রন বিন্যাস একই রকম সে সকল মৌল একই গ্রুপে অবস্থান করে। অপরদিকে যে সকল মৌলের বাইরের প্রধান শক্তিস্তরের ইলেকট্রন বিন্যাস ভিন্ন রকম সে সকল মৌল ভিন্ন গ্রুপে অবস্থান করে।
যে সকল মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে বাইরের শক্তিস্তরে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা 1টি সে সকল মৌল সাধারণত ইলেকট্রন দান করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা দেখায়। যেমন সোডিয়ামের বাইরের শেলে 1টি ইলেকট্রন আছে। তাই সোডিয়াম ঐ 1টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়।
Na (1s2 2s2 2p6 3s4) = Na+ (1s2 2s2 2p6) + e‾
আবার যে সকল মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে বাইরের শক্তিস্তরে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা 7টি সে সকল মৌল সাধারণত 1টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হবার প্রবণতা দেখায়। যেমন-ক্লোরিনের বাইরের শেলে 7টি ইলেকট্রন আছে। তাই ক্লোরিন 1টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়।
Cl (1s2 2s2 2p6 3s2 3p5 ) + e¯ = Cl¯ (1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 )
অতএব ইলেকট্রন বিন্যাসের মাধ্যমে পর্যায় সারণিতে মৌলের অবস্থান নির্ণয় ও মৌলসমূহের অনেক ধর্ম ব্যাখ্যা করা যায়। এজন্য ইলেকট্রন বিন্যাসকেই পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
a) হাইড্রোজেনের অবস্থান: হাইড্রোজেন একটি অধাতু। কিন্তু পর্যায় সারণিতে হাইড্রোজেনকে তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক ক্ষার ধাতু Na, K, Rb Cs Fr এর সাথে গ্রুপ-1 এ স্থান দেওয়া হয়েছে। এর কারণ ক্ষার ধাতুর মতো H এর বাইরের প্রধান শক্তিস্তরে একটিমাত্র ইলেকট্রন রয়েছে। আবার, হাইড্রোজেনের অনেক ধর্ম ক্ষার ধাতুগুলোর ধর্মের সাথে মিলে যায়। অন্যদিকে, হ্যালোজেন মৌল (F, Cl, Br, I) এর একটি পরমাণু যেমন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে, হাইড্রোজেনও তেমনি একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে অর্থাৎ H এর অনেক ধর্ম হ্যালোজেন মৌলের ধর্মের সাথেও মিলে যায়। তবে হাইড্রোজেনের বেশির ভাগ ধর্ম ক্ষার ধাতুসমূহের ধর্মের সাথে মিলে যাওয়ায় একে ক্ষার ধাতুর সাথে গ্রুপ 1 এ স্থান দেওয়া হয়েছে।
(b) হিলিয়ামের অবস্থান: হিলিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস He (2) ⇒ 1s2 । হিলিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস অনুসারে একে গ্রুপ-2 এ স্থান দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু গ্রুপ-2 এর মৌলসমূহ তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক। এদের মৃৎক্ষার ধাতু বলে। অপরদিকে He একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এর ধর্ম অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়ন, আর্গন, ক্রিপ্টন, জেনন, রেডন ইত্যাদির সাথে মিলে যায়। He এর ধর্ম কখনই তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক মৃৎক্ষার ধাতুর মতো হয় না। তাই হিলিয়ামকে নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহের সাথে গ্রুপ-18 তে স্থান দেওয়া হয়েছে।
(c) ল্যান্থানাইড সারির এবং অ্যাকটিনাইড সারির মৌলগুলোর অবস্থান: পর্যায় সারণিতে ল্যান্থানাইড সারির মৌলগুলো 6 নম্বর পর্যায় ও 3 নম্বর গ্রুপে অবস্থিত এবং অ্যাকটিনাইড সারির মৌলগুলো 7 নম্বর পর্যায় ও 3 নম্বর গ্রুপে অবস্থিত। এই অবস্থানগুলোতে ল্যান্থানাইড সারির এবং অ্যাকটিনাইড সারির মৌলগুলোকে বসালে পর্যায় সারণির সৌন্দর্য নষ্ট হয়। কাজেই পর্যায় সারণিকে সুন্দরভাবে দেখানোর জন্য ল্যান্থানাইড সারির এবং অ্যাকটিনাইড সারির মৌলগুলোকে পর্যায় সারণির নিচে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে।
