ভূমিকা
যাদের জীবন আছে তারাই জীব। জীবন ও জীব একসূত্রে গাঁথা। তাই জীবন মানে প্রাণ বা আয়ু যা জীবদেহে আনে
চৈতন্যশক্তি। মানুষ, পশু-পাখি, গাছ-পালা এদের জীবন আছে, তাই এরা জীব। জীবন সম্বন্ধে জানতে হলে জীব সম্বন্ধে
জানতে হবে। আর জীব সম্বন্ধে জানাই হলো জীবন পাঠ। অর্থাৎ বিজ্ঞানের যে শাখায় জীব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়
তাকে জীববিজ্ঞান বলে। জীব সম্বন্ধে আমরা কী কী জানতে পারি ? জানতে পারি পৃথিবীতে কত ধরনের জীব আছে,
এদেরকে সহজে চেনার উপায় কী, এদের গঠন বৈশিষ্ট্য, এদের জন্ম প্রক্রিয়া, এদের ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা, এদের খাদ্য
গ্রহণ পদ্ধতি, এদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, এদের রোগ-বালাই ও চিকিৎসা, এদের বংশবিস্তার প্রক্রিয়া এবং
এদের জীবনাবসান বা মৃত্যু। এ সব কিছুই হলো জীবন পাঠ।
ইউনিট ১
জীববিজ্ঞানের ধারণা ও জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখা
উদ্দেশ্য এ পাঠ শেষে আপনি-
জীব ও জীববিজ্ঞানের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
জীবের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করতে পারবেন।
জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখাগুলো বর্ণনা করতে পারবেন।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যকার প্রধান পার্থক্য বলতে পারবেন।
প্রধান শব্দ জীব, জীববিজ্ঞান, ভাইরাস, এককোষী ও বহুকোষী জীব, জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখা
আমরা যে এলাকায় বাস করি সে এলাকার আশপাশ লক্ষ করলে মানুষ ছাড়া দেখতে পাবো কিছু গাছ-পালা,
পশু-পাখি, পোকা-মাকড় ইত্যাদি। এ ছাড়া ঘর-বাড়ি, দালান-কোঠা, মাটি, পানি, আলো-বাতাস এসবতো
আছেই। পরিবেশের এসব উপাদানের মধ্যে মানুষ, পশু-পাখি, পোকা-মাকড়, গাছ-পালা এসবের জীবন আছে, তাই এরা
জীব। মাটি, পানি, ইট-পাথর এগুলোর জীবন নেই তাই এরা জড়। জীব এবং জড়বস্তু নিয়েই আমাদের বস্তুজগৎ বা
প্রকৃতি।
মানুষ, পশু-পাখি, গাছ-পালা এসব জীব আমরা খালি চোখে দেখতে পাই, কিন্তু প্রকৃতিতে এমন অনেক জীব আছে
যাদেরকে খালি চোখে দেখতে পাই না, কারণ এরা অতিক্ষুদ্র। অতিক্ষুদ্র বলে এসব জীবকে বলা হয় অণুজীব, এদেরকে
মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা হয়। অধিকাংশ রোগের জীবাণুই অণুজীব। পৃথিবীর সকল জীব এবং অণুজীব
নিয়েই জীবজগৎ (ইরড়ঃধ) গঠিত।
জীবজগতের বিজ্ঞানভিত্তিক পঠন-পাঠন, আলোচনা, গবেষণা এবং প্রয়োগই হলো ইরড়ষড়মু বা জীববিজ্ঞান। অন্যভাবে
বলা যায় জীব তথা জীবনের বিজ্ঞানই হলো জীববিজ্ঞান। ফরাসী বিজ্ঞানী ল্যামার্ক (১৭৪৪-১৮২৯) জীবনের বিজ্ঞান
বোঝাতে ইরড়ষড়মু শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। দু’টি গ্রীক শব্দ ইরড়ং (অর্থ জীবন) এবং খড়মড়ং (অর্থ জ্ঞান)-এর
সমন্বয়ে ইংরেজি ইরড়ষড়মু শব্দটি গঠিত হয়েছে। ইরড়ষড়মু শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ করা হয়েছে জীববিজ্ঞান।
জীববিজ্ঞানের জনক : বিজ্ঞানের যে কোনো শাখায় প্রথম বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা বা গবেষণার যিনি সূত্রপাত করেন
তাকে বিজ্ঞানের ঐ শাখার জনক বলা হয়ে থাকে। উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রকৃতি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন গ্রীক দার্শনিক
অ্যারিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২), তাই অ্যারিস্টটল (অৎরংঃড়ঃষব)-কে জীববিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তবে এরও বেশ
আগে ভারতীয় উপমহাদেশে ঋিষি অথর্বান, সু¯্রূত প্রভৃতি ব্যক্তিগণ উদ্ভিদ ও চিকিৎসা শাস্ত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে
ছিলেন।
জীবনের সূচনা ও বিকাশ : আজ থেকে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সৃষ্টি হয় এবং প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন বছর আগে
পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সূচনা হয় বলে ধারণা করা হয়। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে তখন কোন অক্সিজেন ছিল না, তাই জীবন
সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে জীবগুলো ছিল অণুজীব, আদিকোষী এবং ব্যাকটেরিয়া জাতীয় যারা অক্সিজেন ছাড়াই বাঁচতে
পারতো। পরবর্তীতে সায়ানোব্যাকটেরিয়ার আবির্ভাব ঘটে যা সালোকসংশ্লেষণ (চযড়ঃড়ংুহঃযবংরং) প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডলে
অক্সিজেন যোগ করতে থাকে। মাত্র ৫৪ কোটি বছর আগে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বর্তমান সময়ে বায়ুমন্ডলে
বিরাজমান অক্সিজেন-এর সমান হয়। ফলে বায়ুমন্ডলে পরিবর্তন আসে। অক্্িরজেনবিহীন বায়ুমন্ডল অক্্িরজেনে পূর্ণ হয়।
একে অক্্িরজেন বিপ্লব বলে। এর পরই উন্নত যেমন অক্্িরজেন যুক্ত (অবৎড়নরপ) জীব সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। পুষ্পক
উদ্ভিদ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব ঘটে মাত্র ১৩ কোটি বছর আগে।
জীববিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব
১। জীববিজ্ঞান পাঠ করে আমরা জীবন সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারি।
২। পৃথিবীতে কত ধরনের জীব আছে তা জানতে পারি।
৩। পৃথিবীতে বিরাজমান সকল জীবের নাম, পরিচিতি, স্বভাব ও গুণাগুণ সম্বন্ধে জানতে পারি।
৪। মানব কল্যাণে জীবসমূহকে ব্যবহার ও প্রয়োগ করতে পারি।
৫। জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব ও এদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি।
জীবের বৈশিষ্ট্য
১। জীবদেহ জীবকোষ (cell) দ্বারা গঠিত। ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা ইত্যাদি জীব মাত্র একটি কোষ দ্বারা গঠিত, তাই এরা
এককোষী জীব। বৃক্ষ, গুল্ম, পশু-পাখি, মানুষ প্রভৃতি জীব অসংখ্য জীবকোষ দ্বারা গঠিত, তাই এরা
বহুকোষী জীব। জীবকোষে সজীব প্রোটোপ্লাজম থাকে। নিউক্লিয়াসসহ অন্যান্য কোষাঙ্গাণু
প্রোটোপ্লাজমে অবস্থান করে। তাই প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভৌত ভিত্তি বলা হয়। জড়বস্তু কোন জীবকোষ দ্বারা
গঠিত নয় এবং জড়বস্তুতে কোন প্রোটোপ্লাজম নেই।
২। জীবের বংশবৃদ্ধির তথা শিশু জীব জন্ম দেয়ার ক্ষমতা থাকে যা জড়বস্তুতে নেই।
৩। জীবদেহে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ, যেমন- শ্বসন, পরিপাক, বৃদ্ধি, উত্তেজনায় সাড়া দেয়া,
পরিবেশের সাথে অভিযোজন ইত্যাদি সংঘটিত হয়। জড় বস্তুতে কোন শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ ঘটে না।
৪। জীবের মৃত্যু আছে। জড় বস্তুর মৃত্যু নেই।
মানুষের ডেঙ্গু, বসন্ত, সর্দি, হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে ভাইরাস নামক (অণুজীব থেকেও ক্ষুদ্র)
অণুজীবতুল্য বস্তু দ্বারা। ভাইরাসদেহ কোষ দ্বারা গঠিত নয়, তাই অণুজীব নয়। ভাইরাস হলো জড় ও জীব-এর
মাঝামাঝি রোগ সৃষ্টিকারী এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র বস্তু। কারণ পোষকদেহে এরা বংশবৃদ্ধি করতে পারে। তাই জীবিত
এবং পোষকের বাইরে জড়ের ন্যায় আবরণ তৈরি করে তাই এরা জড়।
জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখা
জীববিজ্ঞানের সূচনা কালে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছিল না, ছিল না কোন উন্নত প্রযুক্তি। তাই পরিবেশে বিরাজমান জীবগুলোকে
তাদের দৃশ্যমান মূল বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে উদ্ভিদ ও প্রাণী এ দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। কোন ধরনের জীব নিয়ে আলোচনা
ও গবেষণা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে জীববিজ্ঞানকে দুটি প্রধান শাখায় ভাগ করা হয়। যথা- ১। উদ্ভিদবিজ্ঞান বা
উদ্ভিদবিদ্যা এবং ২। প্রাণিবিজ্ঞান বা প্রাণিবিদ্যা।
আধুনিক জ্ঞানের আলোকে জীববিজ্ঞানকে দুটির পরিবর্তে পাঁচটি রাজ্যে ভাগ করা হয়ে থাকে, যথা- ১। মনেরা রাজ্য, ২।
প্রোটিস্টা রাজ্য, ৩। ছত্রাক রাজ্য, ৪। উদ্ভিদ রাজ্য এবং ৫। প্রাণী রাজ্য। অর্থাৎ বর্তমানে জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখা পাঁচটি
বলা যায়, তবে মনেরা, প্রোটিস্টা ও ছত্রাক রাজ্যের সদস্যদেরকে স্থূল বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে উদ্ভিদ অথবা প্রাণি রাজ্যের
অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা করা চলে। তাই এ পুস্তকে জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখা দু’টি অর্থাৎ উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান
হিসেবেই বিবেচনা করা হলো।
১। উদ্ভিদবিজ্ঞান : জীববিজ্ঞানের যে শাখায় সব ধরনের উদ্ভিদ, তাদের গঠন, স্বভাব, আবাসস্থল, শ্রেণিবিন্যাস,
পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত, মানব কল্যাণে প্রয়োগ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা হয় তা হলো
উদ্ভিদবিজ্ঞান। উদ্ভিদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা ও গবেষণাই উদ্ভিদবিজ্ঞান। গ্রীক দার্শনিক থিওফ্রাস্টাসকে (খ্রিস্টপূর্ব
৩৭০-২৮৫) উদ্ভিদবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
২। প্রাণিবিজ্ঞান : জীববিজ্ঞানের যে শাখায় সব ধরনের প্রাণী, তাদের গঠন, স্বভাব, আবাসস্থল, শ্রেণিবিন্যাস,
জীবন বৃত্তান্ত, মানব কল্যাণে প্রয়োগ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা হয় তা হলো
প্রাণিবিজ্ঞান। প্রাণীর বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা ও গবেষণাই প্রাণিবিজ্ঞান। গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটলকে (খ্রিস্টপূর্ব
৩৮৪-৩২২) প্রাণিবিজ্ঞানের জনক বলা হয়
উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যকার উল্লেখযোগ্য পার্থক্য
১। উদ্ভিদ দেহ গঠনকারী কোষ জড় কোষ প্রাচীরবিশিষ্ট। প্রাণী দেহ গঠনকারী কোষে কোন জড় কোষ প্রাচীর থাকে না।
২। উদ্ভিদ কঠিন খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। এরা তরল ও গ্যাসীয় খাদ্য শোষণ প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করে। সবুজ উদ্ভিদ (
ক্লোরোপ্লাস্ট এর উপস্থিতির কারণে) নিজ খাদ্য প্রস্তুত করে। প্রাণী কঠিন ও তরল খাদ্য গলধঃকরণ করে ; কোন খাদ্য
তৈরি করতে পারে না।
৩। উদ্ভিদ দেহে কোন সুগঠিত পরিপাকতন্ত্র, ¯œায়ুতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র, রেচনতন্ত্র ইত্যাদি নেই। প্রাণীতে এসব তন্ত্র আছে।
৪। উদ্ভিদ সাধারণতঃ স্থান ত্যাগ করতে পারে না। প্রাণী সাধারণত স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে পারে।
৫। উদ্ভিদ দেহের বৃদ্ধি, মূল ও শাখা-প্রশাখার শীর্ষে ঘটে। প্রাণীর বৃদ্ধি সকল অঙ্গে ঘটে থাকে।
জীববিজ্ঞানের বিশেষ শাখা
জীবের তথা জীববিজ্ঞানের কোন দিকটি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে জীববিজ্ঞানকে বিভিন্ন শাখায়
বিভক্ত করা হয়ে থাকে। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শাখার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হলো।
১। অঙ্গসংস্থান (Morphology) : এ শাখায় জীবের গঠন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাহ্যিক গঠনকে
বহিঃঅঙ্গসংস্থান (External morphology) এবং অভ্যন্তরীণ গঠনকে অন্তঃঅঙ্গসংস্থান (Internal morphology)
বলে। মানুষের দু’টি পা, দু’টি হাত, দু’টি চোখ, একটি মাথা, একটি মুখ, একটি নাক, গড়ন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা
হলো বহিঃঅঙ্গসংস্থান। দেহাভ্যন্তরে হাড়, সন্ধি, পেশির বিন্যাস, বিভিন্ন তন্ত্র ইত্যাদি হলো অন্তঃঅঙ্গসংস্থান।
২। শ্রেণিবিন্যাস (Classification) : বোঝার সুবিধার জন্য এ বিশাল জীবজগৎকে বিভিন্ন দল-উপদলে ভাগ করা হয়।
প্রতিটি জীব প্রজাতি পর্যায়ক্রমে একটি গণ, একটি গোত্র, একটি বর্গ এবং একটি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয়। জীববিজ্ঞানের
যে শাখায় এ নিয়ে আলোচনা করা হয় তা হলো শ্রেণিবিন্যাসতত্ত¡ বা শ্রেণিবিন্যাসবিজ্ঞান (Taxonomy)।
৩। শারীরবিদ্যা (Physiology) : জীবের শ্বসন, রেচন, প্রজনন, পরিপাক ও আত্তীকরণ, সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণ
এসব জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াসমূহ এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
৪। ভ্রƒণবিদ্যা (Embryology) : ভ্রƒণ সৃষ্টি ও বিকাশের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবের সৃষ্টি হয়। জীবের ভ্রƒণ গঠন ও
বিকাশ নিয়ে এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
৫। কোষবিদ্যা (Cytology) : জীবদেহের গঠন ও কার্যের একক হলো কোষ। কোষ ও কোষাঙ্গাণুর গঠন, কাজ ও
বিভাজন সম্বন্ধে এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
৬। বংশগতিবিদ্যা (Genetics) :: মাতা-পিতার বৈশিষ্ট্য সন্তানে স্থানান্তরিত হয়। বংশগতির এ ধারা সম্বন্ধে এ শাখায়
আলোচনা করা হয়।
৭। বাস্তুবিদ্যা (Ecology) : জীবসমূহ যে পরিবেশে বাস করে সেই পরিবেশ এবং সেই পরিবেশের সাথে ঐ জীবসমূহের
আন্তঃসম্পর্ক সম্বন্ধে এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
৮। বিবর্তন (Evolution): আদি কালের অনেক জীবই বর্তমান কালের জীবসমূহ থেকে অন্য রকম ছিল। কালের
বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। জীবসমূহের সূচনা ও বিবর্তন নিয়ে এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
৯। এথনোবায়োলজি(Ethnobiology) : : আদিবাসীগণ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে (বাসস্থান নির্মাণ, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা
ইত্যাদি) তার চারপাশে বিরাজমান জীবসমূহকে কীভাবে ব্যবহার করে সেই জ্ঞান হলো এথনোবায়োলজি।
১০। রোগনিরূপণবিদ্যা (Pathology) : উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে রোগ সৃষ্টির কারণ, রোগ সৃষ্টিকারী জীব শনাক্তকরণ,
প্রতিরোধ এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
১১। অর্থনৈতিক জীববিজ্ঞান (Economic Biology : অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, ঔষধ ইত্যাদির জন্য অর্থনৈতিকভাবে
গুরুত্বপূর্ণ জীবসমূহ পরিকল্পিত উপায়ে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষ, লালন-পালন ও উৎপাদন করা হলো অর্থনৈতিক
জীববিজ্ঞান। অর্থনৈতিক জীববিজ্ঞানের পরিধি অনেক ব্যাপক।
১২। জীবপ্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল (Biotechnology and Genetic Engineering) : মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে জীবজ
প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার হলো জীবপ্রযুক্তি, যেমন- অণুজীব থেকে টিকা, অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ, দুধ থেকে দৈ,
পনির তৈরি ইত্যাদি। জীবের উঘঅ-তে পরিবর্তন ঘটিয়ে উত্তম কিছু করা হলো জিন প্রকৌশল, যেমন- মানুষের
ইনসুলিন উৎপাদনকারী জিন অণুজীবের উঘঅ-তে প্রবেশ ঘটিয়ে মানব ইনসুলিন তৈরি করা।
১৩। টিস্যু কালচার (Tissue Culture) : জীবের ছোট একটি টিস্যু থেকে চাষের (আবাদের) মাধ্যমে অল্প সময়ে
গবেষণাগারে ক্লোন এবং উন্নতমানের জীব উৎপাদন প্রক্রিয়া হলো টিস্যু কালচার।
সারসংক্ষেপ
জীববিজ্ঞান : জীবের বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা, গবেষণা ও প্রয়োগ হলো জীবজ্ঞিান।
এককোষী জীব : একটি মাত্র কোষ নিয়ে গঠিত জীবসমূহ হলো এককোষী জীব, যেমন- ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা।
বহুকোষী জীব : একাধিক কোষ নিয়ে গঠিত জীবসমূহ হলো বহুকোষী জীব, যেমন- একজন মানুষ বা একটি বৃক্ষ, এরা
কোটি কোটি কোষ নিয়ে গঠিত।
ভাইরাস : জড় ও জীব এর মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যযুক্ত অতি ক্ষুদ্রকায় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তু, যেমন- হাম ও বসন্ত রোগ
সৃষ্টিকারী বস্তু।
জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখা : জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখা দু’টি, যথা- উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান