Course Content
পঞ্চম অধ্যায়: খাদ্য, পুষ্টি এবং পরিপাক (Food, Nutrition, and Digestion)
0/17
ষষ্ঠ অধ্যায় : জীবে পরিবহণ (Transport in Living Organisms)
0/21
সপ্তম অধ্যায় : গ্যাসীয় বিনিময়
0/12
অষ্টম অধ্যায় : রেচন প্রক্রিয়া
0/12
দশম অধ্যায় : সমন্বয়
0/13
একাদশ অধ্যায় : জীবের প্রজনন
0/10
দ্বাদশ অধ্যায় : জীবের বংশগতি ও বিবর্তন
0/11
ত্রয়োদশ অধ্যায়: জীবের পরিবেশ
0/10
জীব বিজ্ঞান SSC Online
About Lesson

উদ্দেশ্য
এ পাঠ শেষে আপনি
 জীবের শ্রেণিবিন্যাসের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
 জীবের শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য/ প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে পারবেন।
 জীবের শ্রেণিবিন্যাসের পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারবেন।
 শ্রেণিবিন্যাসের ধাপগুলো লিখতে পারবেন।
 প্রজাতি কী তা বলতে পারবেন।
 দ্বিপদ নামকরণ কী তা বলতে পারবেন।
 দ্বিপদ নামকরণের গুরুত্ব বর্ণনা করতে পারবেন।

প্রধান শব্দ       

শ্রেণিবিন্যাস, দ্বিপদ নামকরণ, জীবের বৈজ্ঞানিক নাম, প্রজাতি

 

 

শ্রেণিবিন্যাস : ধারণা- মানুষ উন্নত বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন জীব, তাই বিভিন্ন ধরনের বস্তু বা বিষয় একসাথে থাকলে
তাদেরকে শ্রেণিবিন্যাস করে নিতে অভ্যস্ত। বস্তুর শ্রেণিবিন্যাস করা মানুষের সহজাত ধর্ম। পাঠাগারে বিভিন্ন
বিষয়ের বই থাকে, বই সমূহকে তাকে সাজানো হয় বিজ্ঞান বিষয়ক বই, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, ধর্মীয় বই, সাহিত্য বিষয়ক
বই ইত্যাদি, এভাবে অর্থাৎ একই বিষয়ের বই একসাথে রাখা হয়। একটি বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী থাকে, তাদেরকে
শ্রেণিবদ্ধ করা হয় সহজভাবে বোঝার জন্য কে কোন শ্রেণীতে পড়ে তার ভিত্তিতে। দেশের হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে
এদের স্তর অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে
শ্রেণিবিন্যস্ত করা হয়ে থাকে। একইভাবে জীবজগতকেও উদ্ভিদজগৎ, প্রাণীজগৎ, অণুজীবজগৎ এভাবে শ্রেণিবিন্যস্ত করা
হয়ে থাকে।
উদ্দেশ্য : পাঠাগারে একই বিষয়ের বই একসাথে রাখা হয় যাতে করে পাঠক অতি সহজে, অল্প পরিশ্রমে ও অল্প সময়ে
তার পছন্দের বইটি বের করে নিয়ে পড়তে পারেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয় বললেই আমরা বুঝতে পারি ঐ বিদ্যালয়ে কোন্ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়, কোন্ বয়সের শিক্ষার্থীগণ
এখানে পড়েন, এখানে কোন্ মানের পাঠ দান করা হয়, সরকারের কোন্ কোন্ সংস্থা বা বিভাগ এ বিদ্যালয়গুলোর
ব্যবস্থাপনায় জড়িত। এ থেকে দেখা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্তরটি জানার সাথে সাথে এর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো বিষয়
জানতে পারা যায় অর্থাৎ অল্প আয়াসে ও অল্প সময়ে অনেক জ্ঞান লাভ করা যায়। উপরে বর্ণিত শ্রেণিবিন্যাস সংক্রান্ত
বিষয়গুলো হতে এর উদ্দেশ্য দাঁড়ায় নি¤œরূপ –
১। একটি অপেক্ষাকৃত জটিল বিষয়কে সহজ করে উপস্থাপন করা,
২। কাজটি অপেক্ষাকৃত কম সময়ে সম্পন্ন করা,
৩। অপেক্ষাকৃত কম পরিশ্রমে কাজটি সম্পন্ন করা,
৪। বিষয়টি সম্বন্ধে অল্প আয়াসে অধিক জ্ঞান লাভ করা,
৫। বিষয়টিকে সহজ অথচ সঠিক উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা

 

জীবজগতের শ্রেণিবিন্যাস
পদ্ধতি
পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণনাকৃত মোট জীব প্রজাতির সংখ্যা প্রায় সতের লক্ষ। এ সতের লক্ষ প্রজাতির জীবের মধ্যে
একটি বৈশিষ্ট্যের মিল হলো এদের সবারই জীবন আছে। এ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পৃথিবীতে বিরাজমান সব জীব প্রজাতিকে
একসাথে রেখে গঠন করা হয়েছে জীবজগৎ। জীবজগতের কিছু কিছুসদস্য চলাচল করতে পারে (যেমন- মানুষ), আর

কতক সদস্য চলাচল করতে পারে না (যেমন- কাঁঠাল গাছ)। চলাচল করতে পারা এবং না পারা এ বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার
কারণে জীবজগতকে পুনরায় উদ্ভিদজগৎ এবং প্রাণিজগৎ এ দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। উদ্ভিদ জগতের কতক সদস্যের
কখনও ফুল হয় না, আবার কতক সদস্যের ফুল হয়। তাই উদ্ভিদ জগতকে পুনরায় অপুষ্পক উদ্ভিদ (যেমন- শৈবাল,
ছত্রাক, ইত্যাদি) এবং সপুষ্পক উদ্ভিদ (যেমন- ধান, গম, আম, জাম, কাঁঠাল, ইত্যাদি) এ দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
কতক পুষ্পক উদ্ভিদের বীজে একটি মাত্র বীজপত্র থাকে (যেমন- ধান, গম), আবার কতক পুষ্পক উদ্ভিদের বীজে দু’টি
বীজপত্র থাকে (যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, শিম, ছোলা ইত্যাদি)। বীজ-এ বীজপত্রের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সপুষ্পক
উদ্ভিদসমূহকে পুনরায় একবীজপত্রী উদ্ভিদ এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ এ দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে প্রাণী
জগতকেও প্রোটোজোয়া (এককোষী প্রাণী, যেমন- অ্যামিবা) এবং মেটাজোয়া (বহুকোষী প্রাণী) ; মেটাজোয়াকে মেরুদন্ডী
ও অমেরুদন্ডী এভাবে ক্ষুদ্রতর দলে ভাগ করা হয়েছে। জীবজগতকে এভাবে ভাগ করতে করতে শেষ পর্যন্ত যে কোনো
একটি উদ্ভিদ প্রজাতিকে (যেমন- কাঁঠাল গাছ) বা যে কোনো একটি প্রাণী প্রজাতিকে (যেমন- দোয়েল পাখি) শনাক্ত করা
সম্ভব হয়।

 

bio

উপরে বর্ণিত শ্রেণিবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত ছকটির প্রতি লক্ষ করলে দেখা যায় যের. বৈশিষ্ট্যের মিল থাকার ভিত্তিতে জীব প্রজাতি সমূহকে এক সাথে একটি বড় দল বা একটি জগত-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে
এবং
রর. বড় দলের জীব-প্রজাতি সমূহকে তাদের মধ্যকার বৈশিষ্ট্যের অমিল তথা ভিন্নতার ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর
দল-উপদলে ভাগ করা হয়েছে।
কাজেই শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি হলো
১। বৈশিষ্ট্যের মিল থাকার ভিত্তিতে জীব-প্রজাতি সমূহকে একসাথে রাখা।
২। বৈশিষ্ট্যের অমিল তথা ভিন্নতার ভিত্তিতে বড় দলের জীব-প্রজাতি সমূহকে ছোট ছোট দল-উপদলে বিভক্ত করা।
শ্রেণিবিন্যাস কী ?
পারস্পরিক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে জীব-প্রজাতি সমূহকে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া হলো জীবের
শ্রেণিবিন্যাস।
প্রজাতি কী ?
প্রজাতি হলো বৈশিষ্ট্যের সর্বাধিক মিলসম্পন্ন একদল জীব যারা আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে উর্বর প্রজন্ম তৈরিতে সক্ষম, যেমন
মানুষ। পৃথিবীর সব মানুষ গঠন ও জনন বৈশিষ্ট্যে সর্বাধিক মিলসম্পন্ন, তাই পৃথিবীর সব মানুষ একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
প্রজাতি হলো শ্রেণিবিন্যাসের মৌলিক একক এবং সর্বনি¤œ ধাপ।
শ্রেণিবিন্যাসের ধাপ- জীবের শ্রেণিবিন্যাসের জন্য কতকগুলো ধাপ বা স্তর নির্দিষ্ট করা আছে। সর্বোচ্চ ধাপ হলো জগৎ,
যেমন- উদ্ভিদজগৎ এবং সর্ব নি¤œ ধাপ হলো প্রজাতি, যেমন- অৎঃড়পধৎঢ়ঁং যবঃবৎড়ঢ়যুষষঁং (কাঁঠাল গাছ)। ধাপগুলো
নি¤œরূপ

main qimg 226970ca71c85de7ae6b032e82259d28

শ্রেণিবিন্যাস প্রক্রিয়ায় প্রতিটি প্রজাতি ক্রমান্বয়ে একটি গণ, গোত্র, বর্গ, শ্রেণী, বিভাগ এবং জগতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
অৎঃড়পধৎঢ়ঁং যবঃবৎড়ঢ়যুষষঁং প্রজাতিটি ক্রমান্বয়ে উপরের সবকটি ধাপের অন্তর্ভুক্ত। অপরপক্ষে একটি জগতকে
বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে এক বা একাধিক বিভাগ, শ্রেণী, বর্গ, গোত্র, গণ ও প্রজাতিতে বিভক্ত করা হয়।
এটিই শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি।
উদ্ভিদজগৎ বা প্রাণিজগতকে ক্রমান্বয়ে বিভাগ (বা পর্ব), শ্রেণী, বর্গ, গোত্র, গণ এবং প্রজাতি পর্যন্ত বিভক্ত করার প্রক্রিয়াই
হলো শ্রেণিবিন্যাস।

দ্বিপদ নামকরণের নিয়মাবলি (Binomial nomenclature rules)

জীবজগতের শ্রেণীবিন্যাস ও নামকরণে দ্বিপদ নামকরন ( binomial nomenclature) একটি অপরিহার্য অংশ। নিম্নলিখিত নিয়মাবলী অনুসরণ করে জীব এর দ্বিপদ নামকরণ করা হয়ে থাকে।

  1. দুটি ল্যাটিন বা ল্যাটিনকৃত শব্দ নিয়ে দ্বিপদ নামকরণের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক নাম গঠিত হবে।
  2. প্রত্যেক দ্বিপদ নামের প্রথম পদটি (অংশটি) হচ্ছে গণ নাম (generic name) দ্বিতীয় পদটি প্রজাতিক।
  3. গণ নামটি হচ্ছে বিশেষ্য (noun) বা জাতিবাচক (generic) তাই এর প্রথম অক্ষরটি শুরু হবে বড় হাতের অক্ষর
  4. প্রজাতিক নামটি বিশেষণ (adjective) বা গুণবাচক (qualifier) তাই এর প্রথম অক্ষরসহ প্রতিটি অক্ষর হবে ছোট হাতের অক্ষর, যেমন – tigris
  5. দ্বিপদ নাম ছাপা অক্ষরে হলে সবসময় ইটালিকস অক্ষরে (অর্থাৎ ডান পাশে হেলানো) হবে, যেমন- Panthera tigris
  6. দ্বিপদ নাম হাতে লিখলে ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করতে হবে এবং প্রত্যেক প্রত্যেক অংশের নিচে (একটি গণ, একটি প্রজাতি) আলাদা আলাদা ভাবে দাগ টেনে দিতে হবে। যেমন-Panthera tigris অতএব, কোনো অবস্থায়ই বাংলা হরফে বৈজ্ঞানিক নাম লেখা যাবে না।
  7. যে বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম কোনো প্রাণীর সঠিক বর্ণনাসহ দ্বিপদ নাম প্রকাশ করবেন তার নাম উক্ত প্রাণীর দ্বিপদ নামের শেষে যুক্ত হবে। যেমন- কার্পু বা কার্পিও মাছ, Cyprinus carpio Linnaeys,1758।

 

দ্বিপদ নামকরণের গুরুত্ব
১। প্রতিটি উদ্ভিদ প্রজাতি বা প্রাণী প্রজাতির বিভিন্ন সাধারণ নাম থাকতে পারে। বিভিন্ন ভাষায় (বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি,
ইত্যাদি) এ নাম ভিন্নতর হয়। অনেক সময় এক ভাষাতেও একটি উদ্ভিদের একাধিক নাম থাকতে পারে, যেমন একই
উদ্ভিদ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইক্ষু, আখ, গেন্ডারী, কুশাইর, উক, ইত্যাদি নামে পরিচিত। এসব নামে এ
উদ্ভিদটিকে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। জীব প্রজাতির দ্বিপদ নাম তথা বৈজ্ঞানিক নাম ঐ জীব
প্রজাতিকে একই নামে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দেয়।
২। দ্বিপদ নামের মাধ্যমে একটি প্রজাতির যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ করা হয়, তাই নামটি জানার সাথে সাথে ঐ প্রজাতির
প্রাপ্তিস্থান, বিস্তার, বৈশিষ্ট্যাবলী, গুণাগুণ, ভেষজগুণ ও খাদ্যমান সবই জানা সম্ভব হয়।
৩। ঐ নির্দিষ্ট প্রজাতিটি বর্তমান বিশ্বে এখনও বিরাজমান, না কি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বা বিলুপ্তির পথে তাও এখন জানা
সম্ভব।
৪। জীববিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন, রসায়ন, ফার্মেসি এসব বিষয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে গবেষণা করা হয়। এসব গবেষণা মূলত
দ্বিপদ নাম নির্ভর অর্থাৎ প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম নির্ভর। বৈজ্ঞানিক নামের মাধ্যমে সব গবেষণার ফলাফল প্রকাশ
করতে হয়।