Course Content
পঞ্চম অধ্যায়: খাদ্য, পুষ্টি এবং পরিপাক (Food, Nutrition, and Digestion)
0/17
ষষ্ঠ অধ্যায় : জীবে পরিবহণ (Transport in Living Organisms)
0/21
সপ্তম অধ্যায় : গ্যাসীয় বিনিময়
0/12
অষ্টম অধ্যায় : রেচন প্রক্রিয়া
0/12
দশম অধ্যায় : সমন্বয়
0/13
একাদশ অধ্যায় : জীবের প্রজনন
0/10
দ্বাদশ অধ্যায় : জীবের বংশগতি ও বিবর্তন
0/11
ত্রয়োদশ অধ্যায়: জীবের পরিবেশ
0/10
জীব বিজ্ঞান SSC Online
About Lesson

ফুসফুস শ্বসনতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভাইরাস এবং বিভিন্ন প্রকার ভাসমান কণা এবং রাসায়নিকের প্রভাবেও ফুসফুস অসুস্থ হতে পারে। অনেক সময় অজ্ঞতা ও অসাবধানতার কারণে ফুসফুসে নানা জটিল রোগ দেখা দেয় এবং সংক্রমন ঘটে। ফুসফুসের সাধারণ রোগগুলোর কারণ, প্রতিকার ও সাবধানতাগুলো জানা থাকলে অনেক জটিল সমস্যা এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও অনেকাংশে কমানো যায়।

আজ আমরা ফুসফুসের সাধারণ রোগ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।

অ্যাজমা বা হাঁপানি ( Asthma ) বলতে কি বোঝ?

অ্যাজমা সাধারণত রোগ প্রতিরোধ- ব্যবস্থার অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো একটি বহিঃস্থ পদার্থ ফুসফুসে প্রবেশ করলে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করতে দেহের প্রতিরোধ- ব্যবস্থার যেটুকু প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা, তার চেয়ে অনেক তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া ঘটলে অ্যাজমা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই অ্যাজমা আক্রান্ত  শিশু বা ব্যক্তির বংশে হাঁপানি বা অ্যালার্জির ইতিহাস থাকে। এটি ছোঁয়াচে নয়, জীবাণুবাহিত রোগও নয়।

কারণ : যেসব খাবার খেলে এলার্জি হয় ( চিংড়ি, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ ইত্যাদি ) বায়ুর সাথে ধোঁয়া, ধূলাবালি, ফুলের রেণু ইত্যাদি শ্বাস গ্ৰহণের সময় ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত সর্দি কাশি থেকে হাঁপানি হওয়ার আশংকা থাকে। বছরের বিশেষ ঋতুতে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিকারঃ

(১) চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়া সম্ভব না। তবে ঔষধ গ্রহণে রোগী কিছুটা আরাম বোধ করে।
(২) যেসব খাদ্য খেলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেড়ে যায় সেই খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
(৩) আলো – বাতাসপূর্ণ গৃহে বসবাস করা।
(৪) যেসব জিনিসের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়ায় তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। যেমন – পশুর লোম, কৃত্রিম আঁশ ইত্যাদি।
(৫) ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা নেওয়া ও সাবধানতা অবলম্বনে খেয়াল করা।
(৬) ধূমপান, গুল, তামাক পাতা, জর্দা ইত্যাদির ব্যবহার  এড়িয়ে চলা ।

(৭) শ্বাসকষ্টের সময় রোগীকে তরল খাদ্য খাওয়ানো।

প্রতিরোধঃ

(১) স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করা।
(২)বাসস্থান বা কর্মক্ষেত্রে, বায়ুদূষণ যেসব বস্তু স্পর্শ করলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হতে পারে, এমন সব বস্তুর সংস্পর্শ থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।
(৩) হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য সবসময় সাথে ঔষধ রাখা ও প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা। এখানে লক্ষণীয় যে হাতুড়ে চিকিৎসকেরা অনেক সময় উচ্চমাত্রায় ক্ষতিক্ষারক স্টেরয়েড দিয়ে এর চিকিৎসা করে থাকে, যেটি উচ্চমাত্রায় প্রয়োগ করলে রোগীর কষ্ট তাৎক্ষনিকভাবে উপশম হলেও দীর্ঘমেয়াদি এবং অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়‌। তাই এ ধরনের চিকিৎসা বা চিকিৎসক থেকে দূরে থাকতে হবে।

 ব্রংকাইটিস ( Bronchitis ) বলতে কি বোঝ?

শ্বাসনালির মাঝে আবৃত প্রদাহকে ব্রংকাইটিস বলে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ঝিল্লিগাত্রে ব্যাথা হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সেঁতসেঁতে ধূলিকণা মিশ্রিত আবহাওয়া, ঠান্ডা লাগা এবং ধূমপান থেকেও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একবার ব্রংকাইটিস হলে বারবার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সাধারণত শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দূষণ ( যেমন কলকারখানার ধুলাবালি এবং ধোঁয়াময় পরিবেশ ) এ রোগের মূখ্য কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রতিকারঃ

(১) ধূমপান, মদ্যপান, তামাক বা তামাক পাতা খাওয়া বন্ধ করা।
(২) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসা করানো।
(৩) রোগীকে সহ্য করতে পারে এমন উষ্ণতা ও শুষ্ক পরিবেশে রাখা।
(৪) পুষ্টিকর তরল ও গরম খাবার খাওয়ানো। যেমন – গরম দুধ, স্যুপ ইত্যাদি।
(৫) রোগীর পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া।

প্রতিরোধঃ

(১) ধূমপান ও তামাক সেবনের মতো বদ অভ্যাস ত্যাগ করা।
(২) ধুলাবালি ও ধোঁয়া পূর্ণ পরিবেশে কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত থাকা।
(৩) শিশু বা বয়স্কদের যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখা।

নিউমোনিয়া ( Pneumonia )বলতে কি বোঝ?

নিউমোনিয়া একটি ফুসফুসের রোগ। অত্যাধিক ঠান্ডা লাগলে এ রোগ হতে পারে। হাম ও ব্রংকাইটিস রোগের পর ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। শিশু এবং বয়স্কদের জন্য এটি একটি মারাত্মক রোগ।

কারণ : নিউমোকক্কাস ( Pneumococcus ) নামক ব্র্যাকটেরিয়া এ রোগের অন্যতম কারণ। এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের আক্রমণে নিউমোনিয়া হতে পারে। এমনকি বিষম খেয়ে খাদ্যনালির রস শ্বাসনালিতে ঢুকলে সেখান থেকেও নিউমোনিয়া হতে পারে‌‌।

প্রতিকারঃ 

(১) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর খুব ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
(২) তরল ও গরম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো।
(৩) বেশি করে পানি পান করানো।

প্রতিরোধঃ

(১) ঠান্ডা যেন না লাগে শিশু ও বয়স্কদের, সেদিকে খেয়াল রাখা।
(২) ধূমপান পরিহার করা।
(৩) আলো- বাতাসপূর্ণ গৃহে বসবাস করা।
(৪) রোগীকে সহ্য করতে পারে এমন উষ্ণতা ও শুষ্ক পরিবেশে রাখা।

যক্ষ্মা ( Tuberculosis ) বলতে কি বোঝ?

যক্ষ্মা একটি পরিচিত বায়ুবাহিত রোগ। তবে ক্ষেত্রবিশেষে যক্ষ্মার জীবাণুযুক্ত ত্বকের ক্ষতের সংস্পর্শে এলে কিংবা সংক্রামিত গরুর দুধ খেয়েও কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। উল্লেখ্য, যেকোনো লোক, যেকোনো সময়ে এ রোগ দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। যারা অধিক পরিশ্রম করে, দুর্বল, সেঁতসেঁতে বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে, অপুষ্টিতে ভোগে অথবা যক্ষ্মা রোগীর সাথে বসবাস করে, তারা এ রোগে সহজে আক্রান্ত হয়‌। আমাদের অনেকের ধারণা, যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের রোগ। আসলে ধারণাটা একেবারেই সঠিক নয়। যক্ষ্মা অন্ত্র, হাড়, ফুসফুস এরকম দেহের প্রায় যেকোনো স্থানে হতে পারে। দেহের এ রোগের আক্রমণ ঘটলে সহজে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যখন জীবাণুগুলো দেহের রোগ প্রতিরোধক শ্বেত রক্তকণিকাকে পরাস্ত করে দেহকে দুর্বল করে, তখনই এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

কারণ : সাধারণত Mycobacterium tuberculosis নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়। তবে Mycobacterium গণভুক্ত আরও কিছু ব্যাকটেরিয়া যক্ষ্মা সৃষ্টি করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে অতি সহজে দেহে রোগ জীবাণুর বিস্তার ঘটে।

রোগ নির্ণয় : কফ পরীক্ষা, চামড়ার পরীক্ষা ( MT test ) , সাইটো ও হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা এবং এক্স- রের সাহায্যে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে যক্ষ্মার ঠিক কোন অঙ্গটি আক্রান্ত হয়েছে, তার উপরে নির্ভর করবে কোন পরীক্ষাটি করতে হবে। বর্তমানে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায় কিনা তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ইদানীং আমাদের দেশে রোগীর কফ, লালা সহ বিভিন্ন নমুনায় যক্ষ্মার জীবাণু আছে কি না তা নির্ণয়ের জন্য DNA ভিত্তিক পরীক্ষা চালু হয়েছে।

প্রতিকারঃ

(১) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা।
(২) এ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি‌ হয়ে থাকে । ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ নিবারণের নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলা।
(৩) প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে বা স্যানাটোরিয়ামে পাঠানো।
(৪) রোগীর ব্যবহারের সবকিছু পৃথক রাখা।
(৫) রোগীর কফ বা থুতু মাটিতে পুঁতে ফেলা।
(৬) রোগীর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা রাখা।
(৭) ডাক্তারের নির্দেশ ব্যতীত কোনো অবস্থায় ঔষধ সেবন বন্ধ না করা।

প্রতিরোধঃ 

(১) এ মারাত্মক রোগের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে হলে শিশুদের যক্ষ্মা প্রতিষেধক বিসিজি টিকা দিতে হবে। শিশুর জন্মের পর থেকে এক বছর বয়সের মধ্যে এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। বিসিজি টিকা শিশুদের যক্ষ্মা থেকে সুরক্ষা দিলেও বড় হয়ে গেলে তা সাধারণত আর কার্যকর থাকে না। তাই শিশু বয়সে টিকা দিলে তা আজীবন যক্ষ্মা থেকে সুরক্ষা দেয় না।
(২) বর্তমানে দেশের বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

ফুসফুসের ক্যান্সার ( Lungs cancer ) বলতে কি বোঝ?

সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে পুরুষের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুস ক্যান্সার। ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান।

(১) বায়ু ও পরিবেশদূষণ এবং বাসস্থান অথবা কর্মক্ষেত্রে দূষণ ঘটতে পারে এমন সব বস্তুর ( যেমন: এ্যাসবেস্টাস, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, নিকেল, কঠিন ধাতুর গুঁড়া ইত্যাদি ) সংস্পর্শে আসার কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়।

(২) যক্ষ্মা বা কোনো ধরনের নিউমোনিয়া ফুসফুসে এক ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়।

রোগ নির্ণয়ঃ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য থুথু বা বিশ্লেষণ করা, বুকের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান,এমআরআই ইত্যাদি করতে হয়। চূড়ান্ত রোগনির্ণয়ের জন্য সাধারণত সাইটো ও হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে হয়।

প্রতিকারঃ

(১) রোগের লক্ষণগুলো দেখা গেলে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

(২) রোগ নির্ণয়ের পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

(৩) প্রয়োজনে রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োগ করা, যেখানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।

প্রতিরোধঃ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যথা :

(১) ধূমপান ও মদ্যপান না করা।

(২) অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য না খাওয়া।

(৩) নিয়মিত ব্যায়াম করা।

(৪) পরিমাণমতো শাক- সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।

সুস্থ সুন্দর জীবন সবার কাম্য। আমরা যদি উপরের নিম্নলিখিত নিয়ম-কানুন গুলো যদি মেনে চলি তাইলে অবশ্যই সুস্থ সুন্দর জীবন-যাপনে সক্ষম হবো।