Course Content
অধ্যায় ২: ভেক্টর
0/14
পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র HSC Physics Revision Note
About Lesson

ঘাত বল (Impulsive Force)

সংজ্ঞা: খুব অল্প সময়ের জন্য খুব বড় মানের যে বল প্রযুক্ত হয় তাকে ঘাত বল বলে।

ব্যাখ্যা: খুব সীমিত সময়ের জন্য খুব বড় মানের ঘাত বল প্রযুক্ত হয়। অনেক সময়ে এ ঘাত বলের মান এত বড় হয় যে এর ক্রিয়াকাল খুব কম হলেও এর প্রভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়। যে স্বল্প সময়ব্যাপী ঘাত বল প্রযুক্ত হয় সেই সময় অন্যান্য বলের প্রভাব উপেক্ষা করা হয়।

উদাহরণ: ধরা যাক, একটি র‍্যাকেট কোনো টেনিস বলকে আঘাত করল। র‍্যাকেট কর্তৃক প্রযুক্ত বল F টেনিস বলটির ভরবেগ পরিবর্তন করে। যে সময় ধরে টেনিস বলটি র‍্যাকেটটির সংস্পর্শে থাকে সে সময়ে র‍্যাকেট কর্তৃক প্রযুক্ত বল টেনিস বলটির উপর ক্রিয়াশীল অন্যান্য বলের তুলনায় অনেক বড় হয়। র‍্যাকেট কর্তৃক প্রযুক্ত এরূপ বল ঘাত বল।

(Definition: The force applied for a very short duration of time is called an impulsive force. Explanation: Impulsive force is significant for a very limited time period. Sometimes, the magnitude of this force is so great that even though its duration is very short, its effect is noticeable. Impulsive force applied for a short time neglects the influence of other forces. Example: Consider a racket hitting a tennis ball. The force F applied by the racket changes the momentum of the tennis ball. During the time the tennis ball is in contact with the racket, the impulsive force applied by the racket is much larger compared to other forces acting on the tennis ball. The force applied in this manner by the racket is an impulsive force.)

বলের ঘাত (Impulse of Force )

সংজ্ঞা কোনো বল ও বলের ক্রিয়াকালের গুণফলকে ঐ বলের ঘাত বলে। 

ব্যাখ্যা : কোনো বল 𝐹→ যদি কোনো বস্তুর উপর ∆𝑟 সময় ধরে ক্রিয়া করে, তাহলে বলের ঘাত 𝐽→ হবে,

𝐽→=𝐹→△𝑡=𝑚𝑎→△𝑡=𝑚△𝑣→△𝑡△𝑡=𝑚△𝑣→=(𝑣𝑓→−𝑣𝑖→)𝐽→=𝑚𝑣𝑓→−𝑚𝑣𝑖→=𝑃𝑟→−𝑃𝑖→=△𝑃→

সুতরাং বলের ঘাত হলো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সমান।

:- 𝐽→ = ∆𝑝→

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘাতবল ও বলের ঘাতের প্রভাব অপরিসীম। বস্তুকে ধীরগতি করতে হলে অর্থাৎ এর বেগ কমাতে হলে বলের ঘাতের প্রয়োগ হয়। এক্ষেত্রে বলের ঘাত গতির বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে। ক্রিকেট খেলায় যখন একজন ফিল্ডার ক্যাচ ধরতে চান তখন গতিশীল বলকে থামিয়ে অর্থাৎ বলটির ভরবেগ শূন্যে নামিয়ে এনে ক্যাচ ধরতে হয়। এতে বলের ঘাতের প্রয়োজন হয় এবং এজন্য একটি বিপরীতমুখী বলকে কিছুক্ষণের জন্য ক্রিয়া করতে হয়। এখন ফিল্ডার যদি তার ঘাত স্থির রাখেন তাহলে ক্রিকেট বলটি তখনই থেমে যাবে। এতে যে সময় ধরে ফিল্ডারের হাতের উপর বল ক্রিয়া করে সেই সময় খুব ক্ষুদ্র হয়। ফলে বলের মান হতে হয় খুবই বৃহৎ যে বল ফিল্ডারের হাতে তীব্র ব্যথা উৎপন্ন করে। এখন বল ধরার মুহূর্তে ফিল্ডার যদি হাতটকে পেছনের দিকে টেনে নেন, তাহলে বলের ক্রিয়াকাল বৃদ্ধি পায়। ফলে থামানোর জন্য প্রয়োজনীয় ঘাতের যোগানদার বলও কম হয় এবং ক্যাচটি ধরাও অনেক কম পীড়াদায়ক হয়। 

একই কারণে আমরা দেখতে পাই একজন মুষ্ঠিযোদ্ধা প্রতিপক্ষের ঘুষির প্রভাব কমানোর জন্য তার মাথাকে পিছনের দিক সরিয়ে নেন। ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যানরা ও উইকেটকিপারও একই কারণে প্যাড ও গ্লাভস পরে মাঠ নামেন। প্যাড ও গ্লাভসে দ্রুতগতির ক্রিকেটবল আঘাত করলে প্যাড ও গ্লাভস কিছুটা থেতলে গিয়ে সংঘর্ষের সময়কাল বাড়িয়ে দেয় ফলে ঘাত বল হ্রাস পায় এবং বলের আঘাত কম পীড়াদায়ক হয়।

সংঘর্ষ (Collision)

সংজ্ঞা : দুটি বস্তু যদি একটা খুব বড় মানের বলে খুব অল্প সময়ের জন্যে পরস্পরকে আঘাত করে তাহলে তাকে বলা হয় সংঘর্ষ।

 

ব্যাখ্যা : 

যেমন হাতুড়ি দিয়ে পেরেককে আঘাত করা বা ক্রিকেট খেলায় ব্যাট দিয়ে বলকে আঘাত করা। এখানে হাতুড়ি বা ব্যাট খুব অল্প সময়ের জন্য পেরেক বা বলের সংস্পর্শ থাকে কিন্তু খুব বড় মানের বলে আঘাত করে। সংঘর্ষে ঘাত বল ক্রিয়া করে। সংঘর্ষের মূল ধারণাটি হলো : সংঘর্ষে বস্তুগুলোর অথবা অন্তত একটি বস্তুর গতি হঠাৎ এমনভাবে পরিবর্তিত হবে যে আমরা “সংঘর্ষের পূর্ব” এবং “সংঘর্ষের পর “কে সুস্পষ্টভাবে আলাদা করতে পারি। সংঘর্ষে ভরবেগের নিত্যতা সূত্র খাটে অর্থাৎ সংঘর্ষের পূর্বের মোট ভরবেগ এবং সংঘর্ষের পরের মোট ভরবেগ একই থাকে। কিন্তু গতিশক্তি সংরক্ষিত থাকে কিনা তার উপর নির্ভর করে সংঘর্ষকে দুভাগে ভাগ করা হয়। স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ এবং অস্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ। স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষে ভরবেগের সাথে সাথে গতিশক্তিও সংরক্ষিত থাকে, অস্থিতিস্থাপক সংঘর্ষে ভরবেগ সংরক্ষিত হয়, কিন্তু গতিশক্তি সংরক্ষিত থাকে না।

স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ (Elastic collision) :

 দুটি বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষ হলে যদি মোট গতি শক্তি সংরক্ষিত থাকে অর্থাৎ যদি বস্তুগুলোর মোট গতি শক্তির পরিবর্তন না হয় তাহলে তাকে স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ বলে। ধরা যাক, m1, ও m2 ভরের দুটি বস্তু একই সরলরেখা বরাবর চলছে। m2 এর বেগ m1 এর বেগের চেয়ে বেশি হলে চলতে চলতে কোনো এক সময় m2 ভরের বস্তুটি m1 ভরের বস্তুটিকে ধাক্কা দিবে অর্থাৎ বস্তুদ্বয় সংঘর্ষে লিপ্ত হবে।

m1 ও m2 ভরের দুটি বস্তুর সংঘর্ষের আগে বেগ যথাক্রমে vli ও v2i এবং সংঘর্ষের পরে যথাক্রমে বেগ vlf ও v2f হলে (চিত্র : ৪.২৮), ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র থেকে লেখা যায়,

9k=
চিত্র :২৮

(4.44) ও (4.45) সমীকরণকে যথাক্রমে লেখা যায়,

 mi1(vlf – VIf) = m2 (v2f – v2i)…..  (4.46)

 এবং m1 (v2If – v2If) = m2 (v22f-v22i)… (4.47)

.(4.47) সমীকরণকে (4.46) সমীকরণ দিয়ে ভাগ করে আমরা পাই,

  Vli + Vlf= V2f+ V2i

বা, Vli – V2i = V2f – VIf

(4.48) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, সংঘর্ষের আগে বস্তু দুটি যে আপেক্ষিক বেগ নিয়ে কাছাকাছি আসে এবং সংঘর্ষের পর বস্তু দুটি যে আপেক্ষিক বেগ নিয়ে দূরে সরে যায় তার মান সমান।

(4.48) সমীকরণকে লেখা যায়,

V2f = Vli + VIf  – V2i

(4.49) সমীকরণকে (4.46) সমীকরণে বসিয়ে আমরা পাই,

9k=

বিশেষ ক্ষেত্রসমূহ :

১. V1 ও V2 সমান হলে বস্তু দুটির মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হবে না।

২. বস্তু দুটির ভর সমান হলে অর্থাৎ m1 = m2 হলে (4.50) ও (4.52) সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়,

   VIf=V2i এবং V2f = Vli… …  (4.53)

সুতরাং সমান ভরের দুটি বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষ হলে একটি বস্তু অপরটির বেগ প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ বস্তুদ্বয় বেগ বিনিময় করে।

৩. যদি সংঘর্ষের পূর্বে m1 ভরের বস্তু স্থির থাকে তাহলে (4.50 ) ও (4.52 ) সমীকরণ অনুসারে,

𝑣𝐼𝑓=2𝑚2𝑚1+𝑚2𝑣2𝑖   এবং 𝑣2𝑓=𝑚2−𝑚1𝑚1+𝑚2𝑣2𝑖      

 

এখন যদি m1 = m2 হয় তাহলে VIf= V2i এবং v2f = 0… .. (4.55)

 অর্থাৎ দুটি সমান ভরের বস্তুর একটি যদি স্থির থাকে তাহলে সংঘর্ষের ফলে গতিশীল বস্তুটি থেমে যাবে এবং থেমে থাকা বস্তুটি গতিশীল বস্তু যে বেগে আসছিল সেই বেগ নিয়ে চলতে থাকবে।

কোনো মসৃণ তলে থেমে থাকা একটি মার্বেলকে যদি পেছন থেকে অন্য মার্বেল দিয়ে অনুভূমিকভাবে আঘাত করা যায়। তাহলে থেমে থাকা মার্বেলটি আগত মার্বেলের বেগ নিয়ে চলতে থাকে এবং আগত মার্বেলটি থেমে যায়। 

৪. যদি স্থির বস্তুর ভর গতিশীল বস্তুর তুলনায় অনেকগুণ বেশি হয় অর্থাৎ m1 >> m2 হয়, তাহলে (4.54) সমীকরণ থেকে আমরা পাই,

Vlf  0 এবং V2f = -V2i   (4.56)

অর্থাৎ একটি হালকা বস্তু যদি একটি থেমে থাকা ভারী বস্তুকে আঘাত করে তাহলে হালকা বস্তুটি প্রায় একই বেগে বিপরীত দিকে ফিরে আসে এবং স্থির বস্তুটি স্থিরই থেকে যায়।

একটি বলকে যদি ভূ-পৃষ্ঠের কোনো অনুভূমিক তলে ফেলা হয় তাহলে বল ও পৃথিবীর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষটি যদি স্থিতিস্থাপক হয় তাহলে বলটি একই বেগে বিপরীত দিকে ফিরে আসে এবং যে উচ্চতা থেকে ফেলা হয়েছিল সেই উচ্চতায় ওঠে। ক্যারামবোর্ডে স্ট্রাইকার দিয়ে বোর্ডের বিপরীত পৃষ্ঠকে সোজাসুজি আঘাত করলে স্ট্রাইকারটি প্রায় একই বেগে বিপরীত দিকে ফিরে আসে। একই কারণে দেয়ালে কোনো বল অনুভূমিকভাবে ধাক্কা খেলে দেয়ালটির ভর যেহেতু অনেক অনেক বেশি এবং স্থির তাই বলটি একই বেগে পিছনের দিকে সরে আসে।

৫. স্থির বস্তুর ভর যদি গতিশীল বস্তুর ভরের তুলনায় নগণ্য হয়, অর্থাৎ m1 << m2 হয় তাহলে (4.54) সমীকরণ থেকে দেখা যায়,

Vlf  2v2ই এবং  V2f  v2…….  .. (4.57)

অর্থাৎ কোনো ভারী বস্তু থেমে থাকা হালকা বস্তুকে আঘাত করলে ভারী বস্তুর বেগ কার্যত অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু হালকা বস্তু ভারী বস্তুটির প্রায় দ্বিগুণ বেগ নিয়ে চলতে থাকে।

মসৃণ তলে থেমে থাকা একটি মার্বেলকে ক্রিকেট বল দিয়ে আঘাত করলে ক্রিকেট বলের বেগের কোনো পরিবর্তন হবে না কিন্তু মার্বেলটি অতিদ্রুত বেগে ছিটকে যাবে।

অস্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ ( Inelastic Collision):

 দুটি বস্তুর মধ্যে ধাক্কা লাগলে বা সংঘর্ষ হলে যদি বস্তুগুলোর মোট গতিশক্তি সংরক্ষিত না হয় অর্থাৎ সংঘর্ষের পূর্বের ও পরের গতিশক্তি যদি সমান না হয় তাহলে সেই সংঘর্ষকে অস্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ বলে। সংঘর্ষের পূর্বের গতিশক্তির চেয়ে পরের গতিশক্তি কম বা বেশি হতে পারে। যদি কম হয় তাহলে দুই গতিশক্তির পার্থক্যটুকু তাপ হিসেবে উদ্ভূত হয় বা সংঘর্ষের ফলে বিকৃত বস্তুর বিভব শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। আবার যদি সংঘর্ষের পরের গতিশক্তি পূর্বের গতিশক্তির চেয়ে বেশি হয় তাহলে সংঘর্ষের ফলে বিভব শক্তি যুক্ত হবে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ভরবেগ ও মোট শক্তি সংরক্ষিত হয়।

m1 ও m2 ভরের দুটি বস্তু vli ও v2i বেগে চলে পরস্পরের সাথে সংঘর্ষের ফলে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে vf বেগ নিয়ে চলতে থাকে তাহলে সংঘর্ষটি হবে একটি অস্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ। এক্ষেত্রে, 

m1vli + m2v2i = (m1 + m2 ) vf