ভূমিকা
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। মানব সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে
শুরু করে যোগাযোগ, চিকিৎসা, কৃষি, প্রতিরক্ষা, শিল্পকারখানা প্রতিটি ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার পিছনে
রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। আর এ উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা রসায়নের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ
অধ্যায়ে রসায়নের পরিচিতি, পরিধি, রসায়নের অনুসন্ধান, গবেষণা পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা
করা হয়েছে।
রসায়ন পরিচিতি
মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ রসায়নের জ্ঞান প্রয়োগ করে আসছে। প্রাচীন মিশরীয় ও ভারতীয় সভ্যতার
যে সকল নিদর্শন পাওয়া গেছে তাতে বিভিন্ন ধাতু যেমন- লোহা, তামা, সোনা ইত্যাদির ব্যবহারের প্রমাণ
পাওয়া গিয়েছে। আবার প্রাচীন যুগের অনেক গুহাচিত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যা থেকে প্রাচীনকালে রং প্রস্তুতি ও তার
ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রাচীনকালে মানুষ ধাতু উৎপাদন ও রং প্রস্তুতির জ্ঞান অর্জন করেছিল যা রসায়নের
অন্তর্গত। তবে এসকল রসায়নের জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগ অনানুষ্ঠানিক ভাবেই হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক রসায়ন চর্চা বা তত্তে¡র
প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রীসে। বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল খৃষ্টপূর্ব প্রায় ৩০০ অব্দে পদার্থের গঠন ও ধর্ম
নিয়ে একটি মতবাদ দেন। এই মতবাদ অনুসারে পৃথিবীর সকল বস্তুই চারটি উপাদান যথা: বায়ু, মাটি, পানি ও আগুন
দিয়ে তৈরি এবং সকল বস্তুর মাত্র চারটি ধর্ম আছে যথা- শুকনা, ভেজা, গরম ও ঠাÐা। যদিও পদার্থের গঠন ও ধর্ম নিয়ে
এরিস্টটলের এই মতবাদ সঠিক নয়, তবুও রসায়ন বিদ্যার বিকাশে এর অবদান অনেক। এ মতবাদের উপর ভিত্তি করে
প্রাচীন ও মধ্যযুগে ‘আল-কেমি’গণ সস্তা বস্তু থেকে মূল্যবান ধাতুযেমন, স্বর্ণ প্রস্তুতের চেষ্টা করেন। তাছাড়া কিছু ‘আল-
কেমি’ অমরত্বের ঔষধ প্রস্তুতির চেষ্টা চালিয়ে যান। যদিও স্বর্ণ বা অমরত্বের ঔষধ দুটোই ‘আল-কেমি’গণ আবিষ্কারে ব্যর্থ
হয়। তবুও তাঁদের এই প্রচেষ্টার ফলে নতুন নতুন রাসায়নিক পদার্থের আবিষ্কার ঘটে যা রসায়ন বিদ্যার বিকাশকে বেগবান
করে। ‘আল-কেমি’ শব্দটি আরবি ‘আল-কিমিয়া’ থেকে উ™ভূত যা দিয়ে মিশরীয় সভ্যতাকে বুঝানো হতো।
পরবর্তীতে রবার্ট বয়েলের রচিত পুস্তক ‘ ‘The Skeptical Chemist” প্রকাশের মাধ্যমে আধুনিক রসায়নের
বিকাশ শুরু হয়, যা বর্তমানে বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। রসায়ন হচ্ছে ভৌত বিজ্ঞানের একটি শাখা
যেখানে পদার্থের গঠন, সংযুক্তি, পরিবর্তন, প্রস্তুতি ও ধর্ম নিয়ে চর্চা করা হয়।
আমাদের চারপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শুরু করে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে রসায়নের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
নিচের ছকে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো: