এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও স্বীকৃত মৌলের সংখ্যা 118টি। একজন নবীন বিজ্ঞানী বা শিক্ষানবিস রসায়নবিদের পক্ষে। পৃথকভাবে সব মৌলের গঠন, ধর্ম ও ব্যবহার সম্পর্কে জানা অসম্ভব। দেখা যায় বেশ কিছু মৌল যেমন Li Na K Rb, Cs-এর ধর্মের ক্ষেত্রে যেমন সাদৃশ্য একইভাবে F, CI, Br, I-এর ধর্মের ক্ষেত্রেও ভিন্ন কিন্তু নিজেদের মধ্যে একইরূপ সাদৃশ্য বর্তমান। এভাবে প্রায় একই ধর্মসম্পন্ন মৌলসমূহকে একই শ্রেণিভুক্ত করে সব মৌলকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাজানো হয়েছে পর্যায় সারণিতে। ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে মৌলের ধর্মাবলির পরিবর্তন ও পুনরাবৃত্তি ঘটে। এ ধর্মসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইলেকট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা, আয়নিকরণ বিভব, পরমাণুর আকার, ধাতব ধর্ম, গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ইত্যাদি। একই মৌলের একাধিক পরমাণু বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মৌলিক অণু, আবার ভিন্ন ভিন্ন মৌলের দুই বা ততোধিক পরমাণু যৌগের অণু সৃষ্টি করে।
ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণীবিভাগ( IUPAC অনুমোদিত সর্বাধুনিক পর্যায় সারণি)
জানা মৌলগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করার উদ্দেশ্যে উনবিংশ শতাব্দী থেকে বিজ্ঞানীদের চেষ্টার শেষ নেই। শুরুতে মৌলগুলোকে ধাতু ও অধাতু এ দুভাগে ভাগ করা হলো। এ ভাগ বেশিদিন টিকে নাই। কারণ এমন কিছু মৌল পাওয়া গেল যাদের মধ্যে ধাতু ও অধাতু এ দুই ধারনের ধর্মই বর্তমান। যেমন – কঠিন (গ্রাফাইড), সিলিকন, আর্সেনিক ইত্যাদি মৌল। এর পর মৌলগুলোকে তার যোজনীর উপর ভিত্তি করে সাজানোর চেষ্টা করা হলো। প্রাথমিকভাবে ভালোই হলো কিন্তু পরবির্ততেই মহাবিপদ এসে হাজির হলো।
সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী মৌলগুলো একই গ্রুপে এসে হাজির হলো। লিথিয়াম (Li), সোডিয়াম (Na), পটাসিয়াম (K) এর মতো তীব্র
তড়িৎ ধনাত্মক বিজারক মৌলগুলোর সাথে ফ্লোরিন (F), ক্লোরিন (CI), ব্রোমিন (Br) এর মতো তীব্র তড়িৎ ঋণাত্মক জারক মৌলগুলোর একই গ্রুপে জায়গা হলো। বিজারক মৌলের ধর্মের সাথে জারক মৌলের ধর্ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১৮৯২ সালে বিজ্ঞানী জে. ডাবলু, ডোবেরিনার (J W. Dobereiner) তার ত্রয়ী সূত্র প্রদান করেন। তাঁর প্রস্তাবনা অনুযায়ী মৌলগুলোকে তিন তিনটি করে ভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। একই শ্রেণির মৌলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের যথেষ্ট সাদৃশ্য পাওয়া গেল। বিভক্ত ত্রয়ীগুলো ছিল এ ধরনের
প্রথম জয়ী Li Na K I
দ্বিতীয় ত্রয়ী Cl, Br,
তৃতীয় জয়ী Fe Co Ni
বিজ্ঞানির এ চেষ্টাও সফল হলো না। মাত্র গুটি কয়েক মৌলের ক্ষেত্রে এ ধারণা প্রযোজ্য হয়। প্রধান সমস্যা হলো তখন অনেক মৌলই আবিষ্কার হয় নাই।
১৮৬২ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী ডি স্যান কোর্টোইজ (De Chan Courtois) মৌলগুলো খাড়া করে এমনভাবে সাজানোর চেষ্টা করেন যেন মৌলের অবস্থানগত উচ্চতা মৌলের পারমাণবিক ভরের সমাণুপাতিক হয়। মৌলের এ ধরনের বিন্যাস টেলুরিক ক্রু (Tellurie
Screw) নামে পরিচিত। এ প্রচেষ্টা সফল না হলেও আধুনিক পর্যায় সারণির পথের সন্ধান খুঁজে পাওয়া গেল। এ প্রচেষ্টার ফলে
বেড়িয়ে এলো একই ধরনের ধর্মবিশিষ্ট মৌলগুলো পরস্পরের ঠিক উপরে ও নিচে অবস্থান করছে। ১৮৬৪ সালে বিজ্ঞানী জন নিউল্যান্ডস্ (John Newlands) মৌলগুলোকে পারমাণবিক ভরের উপর ভিত্তি করে সাজানোর চেষ্টা করেন। তিনি দেখান, পর্যায় তালিকায় প্রথম মৌলের ধর্মের সাথে অষ্টম মৌলের ধর্মের যথেষ্ট মিল আছে। একইভাবে দ্বিতীয় মৌলের সাথে নবম মৌলের, তৃতীয় মৌলের সাথে দশম মৌলের ধর্মের মিল আছে। এ নিয়মকে নিউল্যান্ডের অষ্টক সূত্র (Law of Octaves) বলা হয়।
এক্ষেত্রে H ও F এর ধর্মের সাদৃশ্য, Li ও Na এর ধর্মের সাদৃশ্য, Be ও Mg এর ধর্মের সাদৃশ্য, B ও Al এর ধর্মের সাদৃশ্য, C ও Si এর ধর্মের সাদৃশ্য, N ও P এর ধর্মের সাদৃশ্য, OS এর ধর্মের সাদৃশ্য, E ও Cl এর ধর্মের সাদৃশ্য ছিল বিশেষভাবে দেখার মতো। নতুন নতুন মৌলের আবিষ্কারের কারণে এ চেষ্টা সফল হলো না। মজার বিষয় হলো তখন পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় মৌলগুলোর আবিষ্কার হয়নি।
১৮৬৯ সালে বিজ্ঞানী লুথার মেয়ার ( Lother Meyer) প্রস্তাব করেন নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে মৌলগুলো তাদের ধর্মের পর্যায়ক্রমিক আবর্তন ঘটে। তিনি দেখান যে, মৌলগুলোর পারমাণবিক আয়তন ওদের পারমাণবিক ভরের সাথে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়।
কোনো মৌলের পারমাণবিক আয়তন=মৌলটির পারমাণবিক ভর ℅মৌলটির আপেক্ষিক গুরুত্ব
তিনি মৌলগুলোকে ওদের পারমাণবিক ভরের বিপরীতে পারমাণবিক আয়তনের লেখচিত্র অঙ্কন করেন। কিছু সমস্যা হলো কঠিন
অবস্থায় অনেক মৌলের আপেক্ষিক গুরুত্ব সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব হয় না। বহুরূপী মৌল যেমন C,SSP এদের ক্ষেত্রে আরো বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হলো। ঠিক একই সময়ে (১৮৬৯) রাশিয়ান বিজ্ঞানী দ্রিমিত্রি মেন্ডেলিফ (Dmitri Mendeleev) মৌলগুলোর পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজানোর ক্ষেত্রে পর্যায় সূত্র প্রকাশ করে। তিনি প্রস্তাব করেন – “ মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের ক্রমবর্ধমান
পারমাণবিক ভরের সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।” অর্থাৎ মৌলগুলোকে তাদের পারমাণবিক ভরের উচ্চক্রম অনুসারে সাজালে
দেখা যায় নির্দিষ্ট দূরত্বের পর প্রায় একই ধর্ম সম্পন্ন মৌলের আবির্ভাব ঘটে। তিনিই প্রথম মৌলগুলোকে পর্যায় ও গ্রুপ বা শ্রেণি
বরাবর ভাগ করেন। তিনি মৌলগুলোকে সাতটি পর্যায় ও আটি শ্রেণি হিসেবে ভাগ করেন।
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির বেশ কিছু ত্রুটি দেখা যায়। যেমন- আইসোটোপের স্থান, হাইড্রোজেনের স্থান, একই ধর্ম সম্পন্ন মৌলের ভিন্ন গ্রুপে স্থান এবং ভিন্ন ধর্ম সম্পন্ন মৌলের একই গ্রুপে স্থান এ ধরনের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়ায় এ পদ্ধতির কার্যকারিতা
বিনষ্ট হয়ে যায়।
বিশেষ করে ল্যান্থানাইড ও অ্যাকটিনাইড সিরিজের ক্ষেত্রে আরো বেশি অসুবিধার দেখা যায়। ষষ্ঠ পর্যায়ের মৌল ল্যান্থানাইড, La(57) এর সাথে পরবর্তী ১৪টি মৌলকে ( 58-71 পর্যন্ত) একই স্থানে স্থান দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একই স্থানে ১৫টি মৌলকে স্থান দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে ল্যান্থানাইড সিরিজের ১৫টি মৌলকে মূল পর্যায় সারণির নিচে স্থান দেয়া হয়।
একইভাবে ৭ম পর্যায়ের মৌল অ্যাকটিনাইড, Ac(89) এর সাথে পরবর্তী আরো ১৪টি মৌল (90–103 পর্যন্ত) একই স্থানে স্থান দেয়া হয়েছে। ল্যান্থানাইড সিরিজের মৌলের মতো এদেরকেও অ্যাকটিনাইড সিরিজ নাম দিয়ে মূল পর্যায় সারণির নিচে রাখা হয়। মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির এত সব ত্রুটির কারণে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন, মৌলসমূহকে পারমাণবিক ভরের উপর ভিত্তি করে সাজানো সম্ভব নয়। নিশ্চিয়ই মৌলের পরমাণুর গঠনভিত্তিক এমন কোনো উপাদানের মূখ্য ভূমিকা আছে যার প্রভাবে মৌলসমূহের মধ্যে পর্যায়ভিত্তিক ধর্ম প্রকাশ পেয়ে থাকে। ১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী জে. মোসলে (J. Mosley) তার X-ray পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, মৌলসমূহের ধর্মাবলি তাদের পরমাণুর প্রোটন সংখ্যার উপর নির্ভরশীল। তখন সব বিজ্ঞানী স্বীকার করেন যে, পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি হচ্ছে পারমাণবিক সংখ্যা, পারমাণবিক ভর নয়। তাই আধুনিক পর্যায় সূত্রকে এভাবে বর্ণনা করলেন— “মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।” ১৯১৪ সালে বিজ্ঞানী নীলস বোর (Neils Bohr) আধুনিক দীর্ঘ পর্যায় সারণির কাঠামো তৈরি করেন। এ পর্যায় সারণিতে ১৮টি গ্রুপ ও আপাতত সাতটি
পর্যায় হিসেবে মৌলগুলোকে স্থান দেয়া হয়েছে।
আধুনিক পর্যায় সারণি :
পর্যায় সারণি মৌলগুলোকে সুনির্দিষ্ট স্থানে স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন একটি বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা যে ব্যবস্থার মাধ্যমে আবিষ্কৃত মৌলগুলোকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, একজন শিক্ষানবিস রসায়নবিদ স্বল্প সময়ের মধ্যে আবিষ্কৃত মৌলগুলো সম্পর্কে সঠিক ও পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারেন। ইলেকট্রন বিন্যাসই পর্যায় সারণির মূলভিক্তি। আধুনিক পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোকে পর্যায় ও গ্রুপ বরাবর ভাগ করা হয়েছে। আপাতত সাতটি পর্যায় ও আঠারোটি গ্রুপ বর্তমান।
পর্যায়গুলোকে ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায় এভাবে ভাগ করা হয়েছে। গ্রুপগুলোকে 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, করার পর ঐ মৌলের সর্বশেষ ইলেকট্রনটি যে অরবিটালে প্রবেশ করবে মৌলটি ঐ ব্লকের মৌল। যেমন H মৌলের পরমাণুর
11, 12, 13, 14, 15, 16, 17 ও 18 এভাবে ভাগ করা হয়েছে। আধুনিক পর্যায় সারিতে মৌলগুলোকে আবার sp d ও f ব্লক এভাবেও ভাগ করা হয়েছে। মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস
ইলেকট্রনটি s অরবিটালে প্রবেশ করে বলে || মৌলটি s-ব্লকের অন্তরভুক্ত। Na মৌলের ১১তম ইলেকট্রনটি 3s অরবিটালে প্রবেশ করবে।
করে বিধায় Na মৌলটিও এ-ব্লকের মৌল। Ca মৌলের ২০তম ইলেকট্রনটি 4s অরবিটালে প্রবেশ করে বলে Ca মৌলটি এ-ব্লকের মৌল B মৌলের ৫ম ইলেকট্রনটি 2p অরবিটালে প্রবেশ করে বলে B p ব্লকের মৌল N মৌলের ৭ম ইলেকট্রনটি 2p অরবিটালে প্রবেশ করে বলে N মৌলটি p-ব্লকের মৌল। Sc মৌলের ২১তম ইলেকট্রনটি 3d অরবিটালে প্রবেশ করে বলে Sc d-ব্লকের মৌল। Fe মৌলের ২৬তম ইলেকট্রনটি 3d অরবিটালে প্রবেশ করে বলে Fe d-ব্লকের মৌল।
পর্যায় তালিকার ও 2 গ্রুপের মৌলগুলো :-ব্লকের মৌল 1, 3, 14 15 16 17 18 তম গ্রুপের মৌলগুলো p-ব্লকের মৌল। 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11 12 তম গ্রুপের মৌলগুলো -ব্লকের মৌল। ল্যান্থানাম, La (57) এর পরবর্তি ১৪টি মৌল -ব্লকের মৌল। একইভাবে অ্যান্টেনিয়াম, Ac(89) এর পরবর্তি ১৪টি মৌল -ব্লকের মৌল। -ব্লকের মৌলগুলোকে ও নং গ্রুপের মৌলের
সাথে স্থান দেয়া হয়। যদি পর্যায় তালিকা আলাদাভাবে এ মৌলগুলোকে স্থান দেয়া হয়। পর্যায় তালিকার ১ম পর্যায়ে মাত্র দুটি মৌল, 1 ও He। ২য় পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ৮টি। ৩য় পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ৮টি। অর্থ পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ১৮টি। ৫ম পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ১৮টি। ৬ষ্ঠ পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ৩২টি। ৭ম পর্যায়েও মৌলর সংখ্যা
৩২টি। ল্যান্থানাম, La(57) সহ পরবর্তী আরো ১৪টি মৌল অর্থাৎ এ ১৫টি মৌলকে ল্যান্থানাইড সিরিজের মৌল বলা হয়। একইভাবে অ্যাক্টেনিয়াম, Ac( 89 সহ পরবর্তি আরো ১৪টি মৌল অর্থাৎ এ ১৫টি মৌলকে অ্যাক্টেনাইড সিরিজের মৌল বলা হয়। পর্যায় তালিকার ১নং গ্রুপের মৌলগুলোর মধ্যে H ভিন্ন বাকী মৌলগুলোকে ক্ষারধাতু বলা হয়। ২নং গ্রুপের মৌলগুলোকে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয়। ১৮তম গ্রুপের মৌরগুলোকে নবেল গ্যাস বলা হয়। He মৌলটি -ব্লক মৌল হলেও পর্যায় তালিকায় তার অবস্থান ১৮তম গ্রুপের মৌলের উপরে। কারণ He রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়।
ইলেকট্রন বিন্যাস হতে পর্যায় সারণিতে মৌলের অবস্থান নির্ণয়
ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণিবিভাগ
ইলেকট্রন বিন্যাস অনুযায়ী মৌলসমূহকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যা নিম্নরূপ :
(১) s -ব্লক মৌল,
(2) p-ব্লক মৌল,
কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের শেষ ইলেকট্রনটি যে অরবিটালে প্রবেশ করবে তাকে ঐ ব্লকের মৌল ধরা হয়।
(৩) d-ব্লক মৌল,
(8) f-ব্লক মৌল
(১) s-ব্লক মৌল
যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে শেষ ইলেকট্রনটি – অরবিটালে প্রবেশ করে সে সব মৌলকে এ-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির 1. 2 শ্রেণির এবং He হলো -ব্লক মৌল। এ-ব্লক মৌলের মোট সংখ্যা মোট ১৪ টি। এসব মৌলের সর্ববহিঃস্তরে s’ অথবা ‘ ইলেকট্রন বিন্যাস থাকে। যেমন-
H ( 1 ) = 1s1
He( 2 ) = 1s2 Be(4) = 1s2 2s2
Li(3) = 1s2 2s1
Na(11) = [Ne] 3s K ( 19 ) = [Ar] 48
Mg(12) = [Ne] 3s
[[Ca( 20 ) = [Ar] 4s
(২) p-ব্লক মৌল
যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি p-অরবিটালে প্রবেশ করে তাদেরকে p-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির 13.
14, 15, 16, 17 এবং 18 গ্রুপের He মৌল বাদে অবশিষ্ট মৌলসমূহ এ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। p ব্লকে সর্বমোট 30 টি মৌল রয়েছে।
এসব মৌলের পরমাণুর সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরে p’ থেকে p” পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেমন-
B( 5 ) = 1s2 2s 2p C(6) = 1s2 2s 2 2p 2
O(8)=1s 2s 2p F(9) = 1s2 2s 2p
8/49
N(7) 1s 2s 2p
Ne( 10 ) = 1s2 2s 2p”
(৩) d-ব্লক মৌল
যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি d অরবিটালে প্রবেশ করে তাদের d-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির চতুর্থ পর্যায়ের স্ক্যানডিয়াম Sc( 21 ) থেকে জিঙ্ক, Zn ( 30 ) এবং পঞ্চম পর্যায়ের ইট্রিয়াম, Y (39) থেকে ক্যাডমিয়াম, Cdam হলো d-ব্লক
পর্যায় সারণি ও মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম
ওপেন স্কুল
এইচএসসি প্রোগ্রাম
মৌল। এছাড়া ষষ্ঠ পর্যায় ও সপ্তম পর্যায়ে d-ব্লক মৌল আছে। পর্যায় সারণির ‘3’ থেকে গ্রুপ 12 এর মৌলসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ শ্রেণিতে সর্বমোট 40টি মৌল আছে। এ ব্লকের মৌলের পরমাণুর d থেকে d” পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেমন-
Sc (21) • [Ar] 3d 4s 2 Ti(22) • [Ar] 3d 4s 2
Cr(24)- [Ar]a 3d 4s’ Mn (25) → [Ar] 3d 4s 2
V ( 23 ) [Ar] 3d 4s 2
d-ব্লক মৌলসমূহের বিশেষ বিশেষ ধর্মের কারণে এদেরকে অবস্থান্তর মৌল বলে। সেসব d-ব্লক মৌলের সুস্থিত আয়নে d অরবিটাল ইলেকট্রন দ্বারা আংশিকভাবে পূর্ণ থাকে অর্থাৎ d’ থেকে d” পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকে সেসব মৌলকে অবস্থান্তর মৌল বলে। তবে সকল অবস্থান্তর মৌল d-ব্লক মৌল হলেও সকল d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়। যেমন- Sc, Zn, Y. Cd, Zr, La, Ac ইত্যাদি d-ব্লক মৌল হলেও অবস্থান্তর মৌল নয়। কারণ এদের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি (d- অরবিটালে প্রবেশ করে। তাই এরা d-ব্লক মৌল। কিন্তু এদের স্থায়ী আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাসে আংশিক পূর্ণ d অরবিটাল না থাকায় এরা অবস্থান্তর মৌল নয়। Sc, Zn, Y, Cd, Zr, La, Ac ইত্যাদির স্থায়ী আয়ন হচ্ছে যথাক্রমে S Zn, Y, Cd”, Zr, La” Ach এদের স্থায়ী আয়নগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস হতে দেখা যায়, কোনো কোনো আয়নের d অরবিটালে ইলেকট্রন থাকে না। আবার কোনো কোনো মৌলের স্থায়ী আয়নের d অরবিটালটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে। তাই বলা যায়, সকল অবস্থান্তর মৌল d-ব্লক মৌল হলেও সকল d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়। এসব মৌলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কতিপয় ধর্ম হলো (ক) এদের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা থাকে, (খ) এরা রঙিন যৌগ গঠন করে (গ) প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এবং (ঘ) জটিল যৌগ গঠন করে।
(8) f-ব্লক মৌল
যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি [-অরবিটালে প্রবেশ করে সেসব মৌলকে -িব্লক মৌল বলে। ল্যান্থানাইড (Lanthanides) এবং অ্যাকটিনাইড (Actimides) সিরিজের মৌলসমূহ । -ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। পর্যায় সারণির ষষ্ঠ পর্যায়ের ল্যান্থানাম, La(57) থেকে পরবর্তী লুটেসিয়াম, Lu (71) পর্যন্ত ১৫টি এবং অ্যাক্টিনিয়াম Ac(89) থেকে পরবর্তী লরেনসিয়াম, Lr( 103 ) পর্যন্ত ১৫টি সহ সর্বমোট 30টি মৌল এ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। -ব্লক মৌলসমূহকে পর্যায় সারণির নিচে আলাদাভাবে দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে -িব্লক মৌল হলো সেরিয়াম, Ce(58) হতে লুটেসিয়াম, Lu(71) এবং প্রোটেকটিনিয়াম, Pa( 91 ) থেকে লরেনসিয়াম, Lr(103) পর্যন্ত মোট 27টি। এসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে 1 থেকে 1″ পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেসব [-ব্লক মৌলের সুস্থিত আয়নে [- অরবিটাল আংশিকভাবে ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে অর্থাৎ ” থেকে ” পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকে তাদেরকে আন্তঃঅবস্থান্তর মৌল (inner transition) বলে।
শিক্ষার্থীর কাজ
C(6), F(9), P(15), Na( 11 ), Ni ( 28 ) Br (35), Ba 56 ) মৌলগুলো কোনটি পর্যায় সারণির কোন ব্লকে অবস্থিত তা নির্ণয় করুন।
সার-সংক্ষেপ
s-ব্লক মৌল যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে শেষ ইলেকট্রন টি s অরবিটালে প্রবেশ করে সে সব মৌলকে এ-ব্লক মৌল বলে। এসব মৌলের সর্ববহিঃস্তরে অথবা s ইলেকট্রন বিন্যাস থাকে।
P-ব্লক মৌল : যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি p-অরবিটালে প্রবেশ করে তাদেরকে p-ব্লক মৌল
বলে। p-ব্লকে সর্বমোট 30 টি মৌল রয়েছে। এসব মৌলের পরমাণুর সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরে p’ থেকে p” পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে।
• d-ব্লক মৌল যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি d অরবিটালে প্রবেশ করে তাদের d-ব্লক মৌল বলে।
এ শ্রেণিতে সর্বমোট 40টি মৌল আছে। এ ব্লকের মৌলের পরমাণুর d’ থেকে all পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। • -ব্লক মৌল যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি অরবিটালে প্রবেশ করে সেসব মৌলকে f-এক মৌল
বলে। ল্যান্থানাইড (Lanthanides) এবং অ্যাকটিনাইড (Actinides) সিরিজের মৌলসমূহ [-ব্লকের অন্তর্ভুক্ত।
s-ব্লক ধাতব মৌলের সাধারণ ধর্মাবলি
S ব্লক মৌলের প্রকৃতিতে অবস্থান
s ব্লক মৌলের অন্তর্ভুক্ত ক্ষার ধাতু ও মৃৎক্ষার ধাতু উভয়ই অতিশয় সক্রিয় বলে প্রকৃতিতে এদের মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। এদেরকে যৌগ অবস্থায় বিশেষ করে ক্ষার ধাতুর অক্সাইড, হ্যালাইড ও সিলিকেট হিসাবে এবং মৃৎক্ষার ধাতুগুলোকে কার্বনেট, সালফেট, ফসফেট ও সিলিকেট হিসাবে পাওয়া যায়। ক্ষার ধাতুর মধ্যে প্রকৃতিতে সোডিয়াম (Na) এর পরিমাণ প্রায় 2.83% যার অবস্থান প্রাপ্তির দিক থেকে সপ্তম। পটাসিয়াম (K) এর
পরিমাণ 2-59% যার অবস্থান প্রাপ্তির দিক থেকে অষ্টম। ভূত্বকের ওজন হিসাবে ক্যালসিয়াম (Ca) এর অবস্থান ৫ম ও
ম্যাগনেসিয়াম (Mg) এর অবস্থান ৬ষ্ঠ। ভূত্বকের সোডিয়াম (Na) এবং পটাসিয়াম (K) এর পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি হলেও সমুদ্রের পানিতে NaCl এর পরিমাণ 2-8%
সমুদ্রের পানিতে পটাসিয়াম (K) এর পরিমাণ মাত্র 0-8%। কারণ দ্রবীভূত আকরিক থেকে ভূগর্ভের পানিতে যে পরিমাণ পটাসিয়াম
পাওয়া যায় তার অধিকাংশ উদ্ভিদ তার প্রয়োজনের তাগিদে শোষণ করে নেয়। কিন্তু Na আয়ন সমুদ্রের পানিতে চলে যায়। সমুদ্রের পানি, লবণ হ্রদ এবং লবণের খনিতে Na ও Mg কে যৌগ হিসেবে পাওয়া যায়।
S ব্লক মৌলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধর্ম
ক্ষার ধাতুর বৈশিষ্ট্য।
(১) তড়িৎ ধনাত্মক ধর্ম (Electropositive character) ক্ষার ধাতুগুলোর যোজ্যতা স্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস ns’। ইত্যাদি।
এখানে n = 2, 3, 4
এরূপ ইলেকট্রন গঠন কাঠামোর জন্য ক্ষার ধাতুগুলোর আয়নিকরণ বিভবের মান খুব কম। এরা একটি মাত্র ইলেকট্রনকে ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ কারণে ক্ষার ধাতুগুলো প্রত্যেকেই তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক মৌল। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় তড়িৎ ধনাত্মকতা ধর্ম ততই বাড়তে থাকে। গ্রুপ I এর নিচের দিকের ক্ষার ধাতুগুলোর ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা এত বেশি যে আলোর উপস্থিতিতেই এরা ইলেকট্রন ত্যাগ করে থাকে। এ কারণে K ও Cs ধাতুকে ফটোইলেকট্রিক সেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
(২) গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক (Melting points and boiling points) ক্ষার ধাতুগুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটন 11/49
নিম্ন। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় ধাতুগুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের মান তত কম স্ফুটনাঙ্কের মানের হ্রাসের কারণ ধাতুগুলোর কেলাস ল্যাটিসের বন্ধন দুর্বল হওয়ায় এরা নরম প্রকৃতির হয়। এ .. পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে একটি মাত্র ইলেকট্রন থাকার কারণে এদের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ যথেষ্ট বড় হয় এবং পরমাণুর আকারও বড় হয়। এর ফলে পরমাণুর মধ্যে বন্ধন শক্তি দুর্বল প্রকৃতির হয়। ধাতুর পরমাণুর আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে বন্ধনে অংশগ্রহণ করেনি।
এরূপ ইলেকট্রনের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। এ কারণে ঐ ইলেকট্রনগুলো দ্বারা পরমাণুর মধ্যে পারস্পরিক বিকর্ষণ বলও বৃদ্ধি পায়। ফলে গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক মানের হ্রাস ঘটে। গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে যত যাওয়া যায় পারস্পরিক বিকর্ষণ বলের মানের তত বৃদ্ধি ঘটে এবং গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক মানের হ্রাস ঘটে। এ কারণে ক্ষার ধাতুর ১ম মৌল Li এর গলনাঙ্ক 186°C হলেও Cs এর গলনাঙ্ক 28.5°C 1
(৩) আয়নিকরণ বিভব ( lonisation potential) ক্ষার ধাতুগুলোর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে অরবিটালে একটি মাত্র ইলেকট্রন বর্তমান
থাকে। অর্থাৎ এদের যোজ্যতা স্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস ‘। এখানে, n = 2, 3, 4. ইত্যাদি। ক্ষার ধাতুগুলোর পরমাণুর আকার যথেষ্ট বড় হওয়ার কারণে সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল কমে
যায়। ফলে সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ns! ইলেকট্রনকে অপসারিত করতে কম শক্তি প্রয়োজন হয়। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে যত যাওয়া যায় আয়নিকরণ বিভবের মান তত কমতে থাকে। কারণ নতুন শক্তিস্তর যুক্ত হওয়ার কারণে সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে দূরে সরে যায়। এর ফলে সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমে যায়। কম
শক্তি ব্যয় করেই ইলেকট্রনকে অপসারণ করা সম্ভব হয়। ক্ষার ধাতুগুলোর ১ম আয়নিকরণ বিভবের মান নিম্ন হলেও ২য় আয়নিকরণ বিভবের মান অতি উচ্চ। কারণ
(i) M’ আয়নের সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস।
(ii) M আয়নের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আকার।
(iii) নিউক্লিয়াসের কার্যকরী ধনাত্মক চার্জের বৃদ্ধি, ক্ষার ধাতুর ২য় আয়নিকরণ বিভবের মানকে অতি উচ্চ করে তোলে।
(৪) পারমাণবিক ব্যাসার্ধ (Atomic radious) ক্ষার ধাতুগুলো পারমাণবিক ব্যাসার্ধ পর্যায় তালিকায় অন্যান্য গ্রুপের মৌলের
পারমাণবিক ব্যাসার্ধের তুলনায় যথেষ্ট বড়। পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রুপ এর মৌলগুলোর ক্ষেত্রে নতুন নতুন
শক্তিস্তরের সৃষ্টি হয়। যোজ্যতাস্তরের ভিতরের স্তরগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিতরের স্তরগুলো সিন্ডিং করার ক্ষমতা সামগ্রিকভাবে বেড়ে যায়। এ কারণে গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক ব্যাসার্ধের বৃদ্ধি ঘটে
মনে রাখবেন-
গ্রুপ। এর মৌল ক্ষার ধাতুগুলো সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে একটিমাত্র ইলেকট্রন বর্তমান থাকে। যোজ্যতাস্তরের পাশাপাশি নিম্নতর স্তরের s ও p অরবিটাল ইলেকট্রন দ্বারা অষ্টক পূর্ণতা থাকে। অবশ্য Li এর ক্ষেত্রে He এর মতো দুটি ইলেকট্রন বর্তমান থাকে। ক্ষার ধাতুগুলোর যোজ্যতা স্তরের পাশাপাশি নিম্নতর শক্তিস্তরের ns up” ইলেকট্রনীয় গঠন কাঠামো বিদ্যমান থাকায় তাঁর সিন্ডিং প্রভাব দ্বারা ক্ষার ধাতুর যোজ্যতা স্তরের একমাত্র ইলেকট্রনকে তার নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল থেকে আড়াল করে রাখে। ফলে ক্ষার ধাতুর যোজ্যতা ইলেকট্রনটি তার পরমাণু নিউক্লিয়াস থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে অবস্থান করতে পারে। যোজ্যতান্তরের ইলেকট্রনটি নিউক্লিয়াসের সাথে অনেকটাই হালকাভাবে যুক্ত থাকে। ক্ষার ধাতুর পূর্ববর্তী গ্রুপ 18তম গ্রুপের মৌল নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর ক্ষেত্রে ইলেকট্রন দ্বারা একটি শক্তিস্তর অষ্টক অপূর্ণ হওয়ার পর ক্ষার ধাতু মৌল গ্রুপের মৌলের শেষ ইলেকট্রনটি। তার পরবর্তী এবং অপেক্ষাকৃত বড় আকারের নতুন শক্তিস্তরে প্রবেশ করে। ফলে মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ তথা পরমাণুগুলোর আয়তনের বৃদ্ধি ঘটে। এ কারণে গ্রুপ এর মৌলগুলোর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ ও আয়তন পর্যায় সারণির অন্যান্য গ্রুপের মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ ও আয়তনের তুলনায় বড় হয়।
(৫) ধাতব ধর্ম (Metallic Character) H ব্যতীত গ্রুপের মৌলসমূহ প্রকৃত অর্থেই আদর্শ ধাতু। এ ধাতুগুলো ঘাতসহ, নমনীয়, তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। এদের ছুরি বা চাকু দিয়ে সহজেই কাটা যায়। অর্থাৎ এরা নরম প্রকৃতির। গ্রুপের উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের ধাতন প্রকৃতি তত বেড়ে যায়। কারণ গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে যত আসা যায় মৌলগুলোর আকার তত বেড়ে যায় ও আয়নিকরণ বিভবের মান তত কমে যায় এবং ধাতব ধর্ম বেড়ে যায়।
(6) প্যারাচুম্বকত্ব ও ভারাচুম্বকত্ব ধর্ম ক্ষার ধাতুগুলো প্রত্যেকেরই যোজ্যতা স্তরে অরবিটালে একটিমাত্র
nis’ ইলেকট্রনীয় গঠন কাঠামো প্রাপ্ত থাকে। এখানে n = 2, 3, 4….. ইত্যাদি। যোজ্যতা অরে
12/49
অযুগ্মভাবে অবস্থান করায় ক্ষার ধাতু প্যারাচুম্বকত্ব ধর্ম সম্পন্ন হয়।
ক্ষার ধাতু তার যোজ্যতাস্তরে ns’ ইলেকট্রনটিকে দান করে M” আয়নে পরিণত হয়। M’ আয়নটি ক্ষার ধাতুটি যে পর্যায়ে অবস্থান করে ঠিক তার পূর্ববর্তী পর্যায় নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রনীর গঠনকাঠামো প্রাপ্ত হয়। M’ আয়নের পারমাণবিক অরবিটালের কোনো অযুগ্ম ইলেকট্রন না থাকায় এটি ডায়াচুম্বকত্ব ধর্ম প্রদর্শন করে। অর্থাৎ চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় না।
(7) নরম ধাতু । ক্ষার ধাতুগুলো নরম প্রকৃতির। সহজেই ছুরি বা চাকু দ্বারা কাটা যায়। ক্ষার ধাতুগুলোর পারমাণবিক আয়তন হওয়ার জন্য এদের মধ্যে ধাতব বন্ধনশক্তি খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়। ফলে ক্ষার ধাতু নরম প্রকৃতির হয়। গ্রুপের উপর থেকে যত নিচে যাওয়া যায় পারমাণবিক আকারের তত বৃদ্ধি ঘটে এবং ধাতব বন্ধন দুর্বল হতে থাকে। ধাতুর নরম প্রকৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
Li থেকে Na, Na থেকে K এবং K থেকে Rb বেশি নরম প্রকৃতির হয়।
(১) বিজারণ ধর্ম (Reducing Property) ক্ষার ধাতুর মৌলগুলোর ক্ষেত্রে গ্রুপ বরাবর উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় পারমাণবিক আকার তত বাড়তে থাকে। ফলে বিজারণ ক্ষমতাও বাড়তে থাকে। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে আয়নিকরণ বিভবের মান কমতে থাকে। এ কারণে Cs হলো তীব্র বিজারক এবং Li হলো সবচেয়ে দুর্বল বিজারক ।
মৃৎক্ষার ধাতুর বৈশিষ্ট্যসমূহ :
ক্ষার ধাতুগুলোর ন্যায় মৃৎক্ষার ধাতুগুলোও যথেষ্ট সক্রিয়। এ কারণে এদেরকে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। বিভিন্ন যৌগ হিসাবে
বিশেষ করে সিলিকেট, কার্বনেট, সালফেট ও ফসফেট হিসাবে প্রকৃতিতে এদের পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে পরিমাণ হিসাবে Ca এর
অবস্থান পঞ্চম ও Mg এর অবস্থান ষষ্ঠ। মৃৎক্ষার ধাতুগুলো সাদা ধূসর বর্ণের হলেও বায়ুর সংস্পর্শে এসে এদের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। এরা ঘাতসহ, নমনীয় এবং এদের ধাতব
দ্যুতি আছে। ক্ষার ধাতু অপেক্ষাও মৃৎক্ষার ধাতুগুলো দৃঢ় প্রকৃতির ও অপেক্ষাকৃত শক্ত । (i) বিজ্ঞারণ ধর্ম (Reducing property) করে ধাতুর তুলনায় মৃৎক্ষার ধাতুগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল বিজারক গ্রুপ বরাবর
উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় এদের বিজারণ ধর্ম তত বৃদ্ধি পায়। মৃৎক্ষার ধাতুগুলো যোজ্যতা স্তরে অরবিটালের 2টি ইলেকট্রনকে দান করে ধনাত্মক বিযোজী আয়নে পরিণত হয়।
M-M² + 2e
(ii) পারমাণবিক ও আয়নিক ব্যাসার্ধ মৃৎক্ষার ধাতুগুলো পারমাণবিক ও আয়নিক ব্যাসার্ধ ক্ষার ধাতুর তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট।
মৃৎক্ষার ধাতুগুলোর ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াস দ্বারা অধিকমাত্রায়
আকর্ষিত হয়। পারমাণবিক আয়তনের হ্রাস ঘটে। আয়নিক ব্যাসার্ধের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ 2 একক
বৃদ্ধি পাওয়ায় এ মানের আরও অধিক হ্রাস ঘটে। এ মান ক্ষার ধাতুর তুলনায় ছোট।
(iii) আয়নিকরণ বিভব ক্ষার ধাতুর তুলনায় মৃৎক্ষার ধাতুগুলোর আয়নিকরণ বিভবের মান অপেক্ষাকৃত বেশি। এদের অপেক্ষাকৃত ছোট আকার ও কম পারমাণবিক ব্যাসার্ধের কারণে আয়নিকরণ বিভবের মানের বৃদ্ধি ঘটে। মৃৎক্ষার ধাতুর দ্বিতীয় আয়নিকরণ বিভবের মান ক্ষার ধাতুর তুলনায় বেশী।
উদাহরণস্বরূপ : ক্ষারধাতু Na এর ১ম আয়নিকরণ বিভবের মান 495.8 kmol হলেও মৃৎক্ষার ধাতু Mg ১ম আয়নিকরণ বিভবের মান 737-7kJ mol”। তবে মৃৎক্ষার ধাতুর ২য় আয়নিকরণ বিভবের মান ক্ষার ধাতুর তুলনায় যথেষ্ট নিম্ন। Mg হয় আয়নিকরণ বিভবের মান 1450 kJ. mol হলেও Na ২য় আয়নিকরণ বিভবের মান 4562 kl molt (iv) শিখা পরীক্ষায় বর্ণ মৃৎক্ষার ধাতুগুলোর মধ্যে বেরিলিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ব্যতীত অন্যান্য ধাতুগুলো এবং তাদের উদ্বায়ী লবণ বিশেষ করে ধাতব ক্লোরাইড শিখা পরীক্ষায় বিভিন্ন বর্ণের শিখা প্রদর্শন করে থাকে।
p-ব্লক মৌলসমূহের সাধারণ ধর্মাবলি
P ব্লক মৌলের রাসায়নিক ধর্ম
পর্যায় তালিকায় গ্রুপ 13 থেকে গ্রুপ 18 পর্যন্ত মৌলসমূহ p ব্লক মৌল। এদের রাসায়নিক ধর্মের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
পরিলক্ষিত
হয়। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এক এক গ্রুপের মৌলের রাসায়নিক ধর্ম এক এক রকম। তবে একই গ্রুপের মৌলের ধর্মের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাদৃশ্য
দেখা যায়।
13তম গ্রুপের মৌলের রাসায়নিক ধর্ম। (Chemical Properties of Group-13 Elements):
B ব্যতীত এ গ্রুপের অন্যান্য মৌলগুলো ধাতব প্রকৃতির। তাই এরা তড়িৎ ধনাত্মক মৌল। 13তম গ্রুপের উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের তড়িৎ ধনাত্মক ধর্ম তত বাড়তে থাকে। মৌলগুলো যৌগ গঠনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই +3 জা অবস্থা প্রদর্শন করলেও + 1 জারণ অবস্থাও প্রদর্শন করে থাকে।
13তম গ্রুপের মৌল B এর ক্ষুদ্র পারমাণবিক আকার, ক্ষুদ্র আয়নিক ব্যাসার্ধ, উচ্চ আয়নিকরণ বিভব ও যোজ্যতা স্তরে d অরবিটালের অনুপস্থিতির কারণে B সমযোজী প্রকৃতির যৌগ গঠন করে থাকে। এমনকি অতিশয় তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল X এর সাথে যুক্ত হয়ে (BX)) বোরন ট্রাই হ্যালাইড এর ক্ষেত্রে B সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি করে থাকে।
(i) অ-জেনের সাথে উচ্চ তাপমাত্রা 13 তম গ্রুপের মৌলগুলো অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ওদের ট্রাইঅক্সাইড যৌগ M, O,
গঠন করে।
উচ্চ তাপমাত্রা 2M₂O,(8)
4M(s) + 30 (g)
এখানে, M = B Al Ga In Th গ্রুপ বরাবর যত উপর থেকে নিচের দিকে যাওয়া যায় অক্সিজেনের প্রতি মৌলের সক্রিয়তা ততই 15 / 49 ALO GO, উভধর্মী, In, O, ক্ষারীয় এবং TI-O, তীব্র ক্ষারধর্মী। গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে অক্সাইড যৌগের অনুধর্ম কমতে থাকে এবং ক্ষার ধর্ম বাড়তে থাকে।
(ii) নাইট্রোজেনের সাথে : উচ্চ তাপমাত্রায় 13 তম গ্রুপের মধ্যে শুধু B ও Al নাইট্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে বোরন BN ও অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড AIN গঠন করে।
Ga, N, Tiমৌল তিনটি 13তম গ্রুপের মৌল হলেও এরা N এর সাথে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। এ মৌল তিনটি +3 জারন অবস্থা থেকে +1 জারণ অবস্থা অধিকতর স্থায়ী।
উৎপন্ন নাইট্রাইড যৌগসমূহ সমযোজী প্রকৃতির হওয়ায় ওরা আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে হাইড্রোক্সাইড যৌগ ও NH, গ্যাস উৎপন্ন করে।
BN(s) + 3H2O ( 7 ) → B(OH),, HBO, + NH (g) AIN(s)+3HO(/) Al(OH),+2NH (g)
(iii) হ্যালোজেনের সাথে গ্রুপ-13 মৌলগুলো হ্যালোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে MX, সাধারণ সংকেতযুক্ত হ্যালাইড যৌগ উৎপন্ন
করে।
2M(5)+3X2 →2MX (s)
2B+3X: 2BX (XF, Cl, Br) 2A1+3X2 → 2AIX (এখানে X = F. Cl Br I )
গ্রুপ-13 নিচের দিকের মৌল Ga In T1 মৌল তিনটি +3 জারণ অবস্থা অপেক্ষা +1 জারণ অবস্থা অধিক স্থায়ী বিধায় এরা মনো
হ্যালাইড যৌগ গঠন করে। হ্যালাইড যৌগগুলোর মধ্যে ফ্লোরাইড যৌগগুলোর বন্ধন প্রকৃতি আয়নিক ও উচ্চ গলনাঙ্ক বিশিষ্ট। ব্যতিক্রম বোরন। ক্লোরাইড, ক্লোরাইড, আয়োডাইড যৌগ সমযোজী প্রকৃতির ও নিম্ন স্ফুটনাঙ্কবিশিষ্ট। বোরন হ্যালাইডগুলো সমযোজী প্রকৃতির বলে এরা তড়িৎ অপরিবাহী, পানিতে অদ্রবণীয় এবং জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয়।
14তম গ্রুপের মৌলের রাসায়নিক ধর্ম :
(১) অ·িজেনের সাথে 14তম গ্রুপের মৌল অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে দুই ধরনের অক্সাইড যৌগ গঠন করে।
(i) মনো-অক্সাইড যৌগ (MO); যেমন- CO, SiO, GeO, SnO, Pho (ii) ডাই-অক্সাইড যৌগ (MO); যেমন- CO. SO, GeO. SO,
ডাই অক্সাইডগুলোর মধ্যে CO অম্লধর্মী SiO–কম অম্লধর্মী। GeO- খুবই সামানা অম্লধর্মী, SnO ও PhO, উভধর্মী অক্সাইড।
(২) হাইড্রোজেনের সাথে লেড (Pb) ভিন্ন 14তম গ্রুপের মৌলগুলো হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে MH যৌগ গঠন করে
থাকে। হাইড্রাইড যৌগের ক্ষেত্রে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে MH অণু গঠিত হয়।
গ্রুপ 15 মৌলসমূহ
নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), আর্সেনিক (As), অ্যান্টিমনি (Sh), বিসমাথ (Bi) মৌলগুলো পর্যায় তালিকায় 15 তম গ্রুপের
মৌল। পর্যায় সারণির 15তম গ্রুপের মৌলগুলোকে নাইকোজেনস ( Pnicogens) বলা হয়। গ্রিক ভাষায় Pnicogens শব্দের অর্থ
শ্বাসরোধক। 15-তম গ্রুপের মৌলগুলো কোনটি শ্বাসকার্যে সহায়তা করে না।
15 তম গ্রুপের মৌলগুলোর সাধারণ ধর্ম :
(i) গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর মধ্যে একমাত্র N গ্যাসীয়। এ গ্রুপের মৌলের ক্ষেত্রে গ্রুপ বরাবর উপর থেকে
নিচের দিকে মৌলগুলো গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। তবে বিসমাথ (Bi) এর গলনাঙ্ক তুলনামূলকভাবে বেশ কম। (ii) পারমাণবিক ব্যাসার্ধ 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ অপেক্ষাকৃত ছোট। গ্রুপ 15 এর মৌলগুলো নিউক্লিয়াসে চার্জের পরিমাণ বেশি হওয়ায় যোজ্যতাস্তরের ইলেকট্রনগুলোকে তীব্রভাবে নিউক্লিয়াস আকর্ষণ করে। ফলে পারমাণবিক ব্যাসার্ধের
মানের হ্রাস ঘটে। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মানের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু N
থেকে P পরমাণুতে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ যে হারে বৃদ্ধি পায় বাকিদের ক্ষেত্রে ততটা বৃদ্ধি পায় না। কারণ P এর পরবর্তী
মৌলগুলোতে ds 1 উপকক্ষের ইলেকট্রনে দুর্বল আবরণী ক্ষমতার কারণে এ ধরনের ব্যতিক্রমের সৃষ্টি হয়।
(iii) আয়নিকরণ বিভব 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর আয়নিকরণ বিভবের মান 14তম গ্রুপের মৌলগুলোর আধুনিকরণ বিভবের মানের তুলনায় অনেক বেশি। 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর নিউক্লিয়াসে চার্জের পরমাণ বেশি হওয়ায় যোজ্যতাস্তরে ইলেকট্রনের প্রতি আকর্ষণ বলের প্রভাবও বেশি। এ কারণে আয়নিকরণ বিভবের মানও বেশি হয়। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে নামতে থাকলে আয়নিকরণ বিভবের মানের ক্রমশ হ্রাস ঘটে। কারণ গ্রুপ বরাবর নিচের দিকে নামতে থাকলে পরমাণুর পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মানের বৃদ্ধি ঘটে। ফলে যোজ্যতান্তরে ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল কমে যায়, আয়নিকরণ বিভবের মানও কমে যায়।
(iv) জারণ অবস্থা : 15তম গ্রুপের মৌলসমূহের যোজ্যতাস্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস ns np’। অষ্টক পূর্ণতার জন্য আরও অতিরিক্ত তিনটি ইলেকট্রনের প্রয়োজন। এ গ্রুপের মৌলগুলো যখন তিনটি ইলেকট্রনকে গ্রহণ করে M’ আসনে পরিণত না তখন অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। যা ঐ মৌলের প্যাটিস শক্তি থেকে সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়। শুধু NP পরমাণু Nts Ph আয়ন সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। বাকি মৌলগুলোর পক্ষে M আয়নে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়। N 2130 kmol 3p আয়নে পরিণত হতো 1450 kJ. mol শক্তির প্রয়োজন হয়। 17/49 উচ্চ আয়নিকরণ বিভবের কারণে 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর ক্যাটায়ন গঠন করার প্রবণতা অপেক্ষাকৃত কম। তবুও এরা +33+5 জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে থাকে। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে +5 আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা অপেক্ষা +3 আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ কারণে গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে নামলে মৌলের যৌগের মধ্যে সমযোজী
বৈশিষ্ট্য কমে যায় এবং আয়নিক বৈশিষ্ট্য বেড়ে যায়।
মনে রাখবেন: নাইট্রোজেন পরমাণুর ক্ষেত্রে +5 থেকে 3 পর্যন্ত সকল জারণ অবস্থাই প্রদর্শন করা সম্ভব। HNO অণুতে +5.
N,O, অণুতে +4, HNO, অণুতে +3, NO অণুতে +2, NO অণুতে I, N. অণুতে O, NH OH অণুতে 1 এবং NH,
অণুতে 3 জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে।
16 তম গ্রুপের মৌল
অক্সিজেন (O), সালফার (S), সেলেনিয়াম (Se), টেলুরিয়াম (Te), পোলোনিয়াম (Po) এর মৌলগুলো পর্যায় সারণির 16 তম গ্রুপের মৌল। এ মৌলগুলোর প্রথম চারটি মৌলকে চ্যানকোজেন মৌল বলে।
16 তম গ্রুপের মৌলের সাধারণ ধর্ম :
১. গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক 16তম গ্রুপের মৌলগুলোর ক্ষেত্রে অক্সিজেনের গলনাঙ্ক ( 218°C) ও স্ফুটনাঙ্ক (-183°C) এর মান নিম্ন হলেও এ গ্রুপের পরবর্তী মৌল সালফার এর গলনাঙ্ক ( 112°C) ও স্ফুটনাঙ্ক (446°C) এর মান উচ্চ। এভাবে গ্রুপ বরাবর নিচের দিকে নামতে থাকলে উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক আয়তনের বৃদ্ধির সাথে সাথে ভ্যান্ডার ওয়ালস আকর্ষণ বলের মানের বৃদ্ধি ঘটে।
২. পারমাণবিক ব্যাসার্ধ 15 তম গ্রুপের তুলনায় 16 তম গ্রুপের মৌলগুলোর পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মান নিম্ন। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পারমাণবিক ব্যাসার্ধের বৃদ্ধি ঘটে।
৩. আয়নিকরণ বিভব 16 তম গ্রুপের মৌলগুলোর আয়নিকরণ বিভবের মান 15 তম গ্রুপের তুলনায় অপেক্ষাকৃত নিম্ন হয়। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে আধুনিকরণ বিভবের মানের হ্রাস ঘটে। কারণ গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক ব্যাসার্ধের বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রনের আবরণী ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যোজ্যতাস্তরের ইলেকট্রনের সাথে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ শক্তির মানের হ্রাস ঘটে।
৪. জারণ অবস্থা : 16 তম গ্রুপের মৌলের যোজ্যতাস্তরের ইলেকট্রনীয় গঠন কাঠামো ns up”। নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রনীয় গঠন প্রাপ্তির জন্য আর দুটি মাত্র ইলেক্ট্রনের প্রয়োজন। এ কারণে এ গ্রুপের মৌলের M- আয়নিক অবস্থা প্রাপ্ত হওয়ার প্রবণতা সর্বাধিক। উপরন্তু পরমাণুগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস ns np অবস্থার কারণে মৌলের পরমাণুগুলো যোজ্যতাস্তরের দুটি ইলেকট্রনকে ব্যবহার করে দুটি সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রনীয় গঠন কাঠামো প্রাপ্ত হতে পারে। 16তম গ্রুপের মৌলের মধ্যে অক্সিজেন ভিন্ন সকল মৌলই যৌগের মধ্যে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে থাকে। ফ্লোরিনের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান 4 আর অক্সিজেনের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান 3-5। অক্সিজেন ফ্লোরিন অপেক্ষা কম তড়িৎ ঋণাত্মক হওয়ায় OF যৌগের মধ্যে অক্সিজেন +2 জারন মান প্রদর্শন করে থাকে।
17/49
17 তম গ্রুপের মৌল :
পর্যায় সারণির 17 তম গ্রুপের অধাতব মৌল F. Cl Br I At. এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য থাকায় এদের একই পরিবারভুক্ত বলা হয়। সমুদ্রের পানিতে ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন ও আয়োডিন লবণ পাওয়া যায়। এ কারণে FCI, Br, s I এ মৌলগুলোকে সাধারণভাবে হ্যালোজেন বলে। গ্রিক ভাষার halos শব্দের অর্থ Sea-salt এবং genes অর্থ to produce অর্থাৎ halogens শব্দের অর্থ Sea-salt producers, যা দিয়ে সমুদ্রের লবণ উৎপন্ন করা হয়। উচ্চ তড়িৎ ঋণাত্নকতার জন্য হ্যালোজেন মৌলগুলো অতিশয় সক্রিয় হয়। এদেরকে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। ফ্লোরিনকে পাওয়া যায় (i) ফ্লোরস্পার (CaF2), (ii) ক্রায়োলাইট (Na, AIF), ক্লোরিনকে পাওয়া যায় (1) সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), (ii) রক
সল্ট (NaCl), (iii) কার্নাসাইট ( KCI MgCl. 6HO), ব্রোমিনকে কার্নাসাইটের মধ্যে KBr ও MgBr হিসাবে এবং আয়োডিনকে
চিলি সল্ট পিটার (NaNO, Nalo) হিসাবে পাওয়া যায়।
হ্যালোজেনগুলো দ্বিপরমাণুক সমযোজী অণু হিসাবে অবস্থান করে। F2, Cl গ্যাসীয়, Br. তরল এবং I, কঠিন অবস্থায় অবস্থান করে।
d-ব্লক মৌলসমূহের সাধারণ ধর্মাবলি
d-ব্লক মৌলের বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নরূপঃ
১. d- ব্লক মৌল পর্যায় সারণিতে গ্রুপ 3 থেকে গ্রুপ 12 এর অন্তর্ভুক্ত।
২. d- ব্লক মৌল গুলির বহিঃস্থ দুটি শক্তিস্তরের ইলেকট্রনীয় কাঠামো (n-1)d ns.
৩. d- ব্লক মৌল গুলি সবগুলো ধাতু।
৪. সব অবস্থান্তর মৌল d- ব্লক মৌলের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু সব d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়।
৫. d- ব্লক মৌল সাধারণত উচ্চ গলনাংক ও স্ফুটনাংক বিশিষ্ট হয়।
৬. d- ব্লক মৌল গুলি সাধারণত পরিবর্তনশীল যোজ্যতা প্রদর্শন করে।
f-ব্লক মৌলসমূহের সাধারণ ধর্মাবলি
f-ব্লক মৌলের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ :
১. সমস্ত f-ব্লক মৌল তড়িৎ ঋণাত্মক ও অত্যন্ত সক্রিয় ধাতু
২. সাধারণভাবে এদের উচ্চ গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক দেখা যায়।
৩. এরা একাধিক জারণ অবস্থা দেখায়। যদিও +3 জারণ অবস্থাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. এদের জটিল যৌগ গঠন করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।
৫.অ্যাক্টিনাইড শ্রেণির বেশির ভাগ মৌল তেজস্ক্রিয় (radioactive) মৌল।
৬.এদের জটিল যৌগ রঙিন (coloured) হয়।
৭. অযুগ্ম ইলেকট্রনের উপস্থিতির জন্য কোনো কোনো -ব্লক মৌল প্যারাচুম্বক (paramagnetic)
প্রকৃতির হয়।
৮. এদের একই ধরনের রাসায়নিক ধর্ম দেখা যায় এবং প্রত্যেকের +3 স্থায়ী জারণ অবস্থা বর্তমান।
৯. এদের উচ্চ ঘনত্ব দেখা যায় ।
১০.f-ব্লক মৌলসমূহের পরমাণুর আকার প্রায় একই বলে এদের পৃথক করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এদের অস্বাভাবিক আয়তন সংকোচন হয় যা ল্যান্থানাইড সংকোচন নামে অভিহিত।
প্রশ্ন: বিরল মৃত্তিকা মৌল কী?
উত্তর: পর্যায় সারণির ৬ষ্ঠ পর্যায়ে ল্যান্থানাইড La(57) এর পরবর্তী মৌল সেরিয়াম, Ce (58) থেকে লুটেসিয়াম, Lu(71) পর্যন্ত 14 টি মৌল ল্যান্থানাইড মৌলকে মধ্যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। এ 14টি মৌলকে পর্যায় সারণির নিচে একটি সম্পূর্ন আলাদা আনুভূমিক সোরিতে তে সারিতে স্থান দেয়া হয়েছে। এ 14 টি মৌলকে ল্যান্থানাইড বলা হয়। প্রকৃতিতে এর অতি অল্প পরিমাণে পাওয়া যায় বলে বিরল মৃত্তিকা বলে ।